ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত চৌকিতে হামলার জন্য আরএসওকে দায়ী করা হচ্ছে

মিয়ানমারে রাখাইন রোহিঙ্গা সংঘাতে নিহত ৩৯, ধরপাকড়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

মিয়ানমারে রাখাইন রোহিঙ্গা সংঘাতে নিহত ৩৯, ধরপাকড়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারের মংডুতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা এবং অস্ত্র লুট ঘটনার পরবর্তী রাখাইন-রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত চলছে। সেদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ধরপাকড় শুরু করেছে দোষী ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের। চলমান সংঘাতে মিয়ানমারে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। রাখাইন প্রদেশে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা এবং অস্ত্র লুটের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে অভিজ্ঞ মহলকেও। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে সুসম্পর্ক। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি-বিজিপি) ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা ও সমাধান বিষয়ে নিয়মিত মুঠোফোনে আলাপ এবং সীমানা চিহ্নিত খাল নাফনদীতে উভয় দেশের জেলেদের স্বাধীনভাবে মাছ ধরা থেকে শুরু করে কোন ধরনের ঝামেলাই ছিল না এ পর্যন্ত। হঠাৎ করে মংডু কাউয়ারবিলের তিনটি চৌকিতে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরএসওকে দায়ী করে দেশটির সরকার বলছে, এ ঘটনায় ৬৩টি অস্ত্র ও ১০ হাজার গুলি লুট হয়েছে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি আগে থেকে সতর্ক রয়েছে। মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনার পূর্বে প্রায় সময় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নারী-পুরুষ ও শিশুদের ধরে প্রয়োজনীয় খাবার ও চিকিৎসা সেবা প্রদান শেষে ঐসব অনুপ্রবেশকারীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। মিয়ানমার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আরাকান রাজ্যে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী মুসলিমদের মিয়ানমার সরকার সেদেশের নাগরিক নয় বলে দাবি করে আসছে। ঐসব রোহিঙ্গা মুসলিমদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করতে হয়ত রাখাইন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ (আরাকান আর্মি) নতুবা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ (আরএসও) দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা এবং অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটাতে পারে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধরপাকড়, জ্বালাও-পোড়াও এবং অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের। স্বদেশে ফিরেছে ২৭ নাগরিক ॥ বাংলাদেশে আটকা পড়া ২৭ জন মিয়ানমার নাগরিক নিরাপদে স্বদেশে ফিরে গেছেন। ১২ অক্টোবর বুধবার দুপুরে টেকনাফ বন্দর ইমিগ্রেশন জেটি দিয়ে এদের ফেরত পাঠানো হয়। বিভিন্ন সময়ে এসব নাগরিক সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় মিয়ানমারের মংডু শহরে থেকে টেকনাফ বন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে আসে। গুপ্তচর আটক ॥ জেলার উখিয়ার খ্যাত কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির কামাল নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে মিয়ানমারের গুপ্তচর সন্দেহে বুধবার সকালে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে উখিয়া থানা পুলিশে দিয়েছে রোহিঙ্গারা। সে মিয়ানমারের মংডু বলি বাজারের আয়ের চরের মৃত সৌরভ হোসেনের ছেলে কামাল উদ্দিন। সংঘাতে নিহত ৩৯ ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রাখাইন প্রদেশে গত কয়েকদিন ধরে সংঘাত চলছে। রবিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের ওই সংঘাতে কমপক্ষে ৩৯ জন নিহত হয়েছে এবং শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ওই সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ জন সদস্য এবং হামলাকারীদের ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে।
×