ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উঠেছে তোরণ চলছে প্রচার

রাজধানীর হাটে পশু উঠছে আগেই, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজধানীর হাটে পশু উঠছে আগেই, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে রাজধানীতে পশুর হাট বসানোর কথা। কিন্তু কোনরকম নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে ইতোমধ্যে ইজারা পাওয়া হাটগুলোতে পশু উঠিয়েছেন তারা। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশেও বসছে অস্থায়ী পশুর হাট। দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারার শর্ত অনুযায়ী আগে থেকে হাটের প্রস্তুতি চলতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে হাট বসানোর সুযোগ নেই। এদিকে অধিকাংশ হাটে দেখা গেল সড়কের মাঝেই একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এদিকে হাটগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে খুঁটি কেনার অভিযোগ করছেন বেপারিরা। গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি দামে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল -আযহাকে সামনে রেখে রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। হাটগুলোর প্রবেশমুখে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি বাঁশের খুঁটি ও তার দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়েছে পশু রাখার জন্য। পোস্টারের পাশাপাশি পশু বিক্রির জন্য মাইকেও জোরেশোরে চালানো হচ্ছে প্রচার, লিফলেট বিতরণ চলছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছাড়িয়ে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে পশুর হাটের প্রচারের পোস্টার। বাদ যায়নি অভ্যন্তরীণ পরিবহনগুলোও। বাস-ট্রাকেও লাগানো হয়েছে পশুর হাটের পোস্টার। ইজারাদাররা পশু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছেন এরই মধ্যে। পশুর বেপারিদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী হাট বসানোর নির্ধারিত সময় হতে এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি থাকলেও তর সয়নি ইজারাদারদের। দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় সবক’টিতেই বিক্রির জন্য পশু ওঠানো হয়েছে। দুয়েকদিন আগে থেকেই পশুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করেছে এসব হাটে। সেখানে বিক্রেতাদের পাশাপাশি আসছেন ক্রেতারাও। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিও চলছে ক্রেতাদের। তবে জমে উঠেনি বেচাবিক্রি। অন্যদিকে অতীতের মতো এবারও ইজারা পাওয়া নির্ধারিত জায়গার বাইরে হাট বসানোর চেষ্টা করছেন ইজারাদাররা। অভিযোগ রয়েছে, হাটগুলোর মূল সীমানার বাইরে এরই মধ্যে বাঁশের খুঁটি পোঁতার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে কোরবানির পশুর হাট বসানোর কথা। ঈদের দিনসহ মোট চার দিন। সেই হিসেবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অস্থায়ী পশুর হাট বসার কথা। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইজারাদারদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা মানতে নারাজ ইজারাদাররা। তারা বলছেন, আগাম হাট না বসালে দূরদূরান্ত থেকে আসা পশুর বেপারিরা বিপাকে পড়বেন। একসঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসা শুরু করলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। পশুগুলো সুশৃঙ্খলভাবে রাখাও মুশকিল হবে। মহাসড়কে যানজট হবে তীব্র। সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া হাটের সীমানা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন ইজারাদাররা। তাদের দাবি, সিটি কর্পোরেশন থেকে হাট বসানোর জন্য যে সীমানা বেঁধে দেয়া হয়, তা খুবই স্বল্প। আর পশুর সরবরাহ অনুযায়ী এত স্বল্প জায়গায় সঙ্কুলান হয় না। যে কারণে সীমানা ছাড়িয়ে হাট পাড়া-মহল্লার সড়কে বিস্তৃত হয়। অনেক টাকা দিয়ে হাটের ইজারা নিয়ে ব্যবসায় লোকসান দেয়া সম্ভব নয়। এ দিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং সেতুমন্ত্রীর বার বার আহ্বানের পরও সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত হাটগুলোর মধ্যে অনেক সড়ক-মহাসড়কের পাশে স্থাপন করা রয়েছে। এসব হাটের কারণে ঈদে চলাচলকারী গাড়িগুলো তীব্র যানজটের কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিএসসিসি এবারই প্রথম যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের মধ্যে কোরবানির পশুর হাট বসিয়েছে। এ হাটটি ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে অবস্থিত। মূল হাটের পরিধি খুবই কম হওয়ায় হাটের বিস্তার সড়কে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এছাড়া দনিয়াতে স্থাপিত হাটটিও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এ হাটটির কারণেও ওই মহাসড়কে তীব্র যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কমলাপুরে স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা নিয়ে প্রথমবারের মতো স্থাপিত হাটটি সম্পূর্ণ সড়কের ওপর বসবে। এ সড়কটি দিয়ে সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করে। এছাড়া টঙ্গী থেকে যাত্রাবাড়ী-পোস্তাগোলামুখী রাজধানীর বিপুল গণপরিবহন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এ কারণে ঈদের সময় সড়কটিতে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য সব হাটই ছোট-বড় হাটের পাশে অথবা ওপরে বসানো হয়েছে। এতে হাটসংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা চলাচলে অসুবিধায় পড়বেন। যাত্রবাড়ী ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আরশাদ আলী আশু জনকণ্ঠকে বলেন, যাত্রাবাড়ী ও দনিয়া দুটি হাটই মহাসড়কের পাশে বসানো হয়েছে। এতে ঈদের সময় এ দুটি সড়কে যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারার শর্ত অনুযায়ী আগে থেকে হাটের প্রস্তুতি চলতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে হাট বসানোর সুযোগ নেই। ইজারাদাররা এর ব্যত্যয় ঘটালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে হাটে বেচাকেনা শুরু করা যাবে। তবে এরও তিন দিন আগে হাটে পশু ওঠানো যাবে। তবে নির্ধারিত এ সময়ের আগেই হাটে পশু ওঠানো হচ্ছে জেনেছি। কিন্তু লোকবলের স্বল্পতার কারণে সব সময় সঠিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে কর্পোরেশন আন্তরিক রয়েছে। গুরুতর কোন অসঙ্গতি দেখা গেলে সেখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
×