ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর মতবিনিময়

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১০ আগস্ট ২০১৬

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদের আগ্রাসন রুখতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংস্কৃতিচর্চা বেগবান করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিস্তৃতির মাধ্যমে প্রকৃত বাঙালী হিসেবে গড়ে তোলা হবে নতুন প্রজন্মকে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পীদের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। দেশব্যাপী সংস্কৃতিচর্চা ছড়িয়ে দিতে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ড. ইনামুল হক, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, চলচ্চিত্রশিল্পী ফারুক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, সঙ্গীতশিল্পী বিশ^জিৎ রায় প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক কর্মকা- না থাকলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতি চেতনাকে শাণিত করতে নানা কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু আমরা চাইছি ব্যাপক আকারে ছেলেমেয়েদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে। শিক্ষার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে তৈরির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চেতনাবোধে ঋদ্ধ করা। শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বিত কার্যক্রমকেই বেগবাগন করতে আমরা তিন মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করব। এটি শুধু সাম্প্রতিক জঙ্গীবাদের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নয়, দেশের সার্বিক স্বার্থে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এটা সত্যি দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির যে উত্থান তা পুরোপুরি অকার্যকর করা যায়নি। আমাদের সন্তানদের তাই সত্যিকারের বাঙালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, সংস্কৃতিবান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে বিলম্ব করার কোন সুযোগ নেই। তাই আমরা সাংস্কৃতিক বোধকে জাগ্রত করতে কাজ শুরু করেছি যেন তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। আর শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। মতবিনিময় সভায় ‘জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সেখানে উঠে আসে সংসদে আইন পাস করে কোন ধর্মীয় বা সামাজিক ভাষণে ভিন্ন ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে কটাক্ষপূর্ণ বা হেয় করে কোন বক্তব্য প্রদান করা যাবে না, সকল স্কুল মাদ্রাসায় এ্যাসেম্বলির সময় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর পাঁচ মিনিট কোন বাঙালী বা বিদেশী মনীষীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বা তার বাণী ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা, স্কুল থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আয়োজন করা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ পালন বাধ্যতামূলক করা, কোন প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে তাদের অনুদান বা সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদ দফতরে পাঠাগার স্থাপন করা, পাঠক্রমে সংস্কৃতি পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করা, স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মহড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা, বিজ্ঞান ও বিতর্ক ক্লাস প্রতিষ্ঠিত করা, দেশব্যাপী শিশু-সংগঠনসমূহের প্রসার, অনুদানপ্রাপ্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অন্তত একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।
×