ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ আলীর তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ জুন ২০১৬

প্রফেসর ড. মুহম্মদ আলীর তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ জুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ৪৫তম জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন। এ প্রস্তাবিত বাজেট বর্তমান চলমান অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা মোটেও উচ্চাভিলাষী নয়। তবে কিভাবে কর্মসংস্থান বাড়বে সে বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত ছিল। অবকাঠামো উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেবল সড়কপথ নয়, রেল ও নৌপথ সুন্দর ও সুষমভাবে তৈরি করা অত্যন্ত দরকার। আসলে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের ব্যর্থতার দায়ে ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নয়। বরং প্রত্যক্ষ কর যত বাড়ানো যায় ততই সমাজে সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১৯৭২-৭৩ সালে তাজউদ্দীন আহমদ, যার পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ঘোষিত বাজেট হচ্ছে সে তুলনায় ৪৩৩ গুণ। বাজেটের আকার বেড়েছে, তবে প্রথম বাজেটে যেভাবে সাম্যের কথা বলা হয়েছিল, এখন আর তা তেমনভাবে ধরে রাখা সম্ভব না হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেটে ভাতের রাজনৈতিক দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা হয়েছে। অনেকগুলো নদীর খনন ও সংস্কার সাধন করা সম্ভব। আবার মূল্যস্ফীতির হার ৫.৮ শতাংশে হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির পর এটি কতটুকু সম্ভব তা বলা একটু কষ্টকর হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারী খাতের বেতন বৃদ্ধির তোড়জোড় চলছে। বেতন বৃদ্ধির পরও যে সকল ট্রাফিক পুলিশ ঘুষের জন্য অত্যাচার করে, পাশাপাশি যেসব সরকাীর কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করে তাদের জন্য পদক্ষেপ বাঞ্ছনীয়। আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অর্থ বরাদ্দ এবং তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। পরিবেশবান্ধব ইটভাঁটিতে ১শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন ও বিদেশী রফতানিতে সহায়তা করতে পারে। করমুক্ত সীমা আরও বাড়িয়ে যাদের আয় ১২ লাখ টাকার ওপর তা বাড়ান যেত। এসএমই খাতে যারা মধ্যম শ্রেণীর এবং উচ্চ শ্রেণীর ব্যবসা করে তাদের করহার বাড়ানো যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে যেখানে বেসরকারী খাতে ২১.৭৮ শতাংশ বিনিয়োগের আশাবাদ সংশোধিত বাজেটে রাখা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে ২৩.৩০ শতাংশ হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান যুগে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা যত বেশি দুর্নীতিমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন তত দেশের জন্য মঙ্গল। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতিতে উদ্যোক্তা শ্রেণী গঠন করার নানাবিধ প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এটি সফল করতে হলে যে ধরনের বেসরকারী খাতের কাজ করার প্রয়োজন তা তেমন হচ্ছে না। নারী উদ্যোক্তা বিশেষত যারা উচ্চ শ্রেণীতে অবস্থান করছেন তারা কিন্তু গরিব-দুখি নারীদের জন্য স্বল্প খরচে ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগের কথা মুখে বললেও বাস্তবে তা করছেন না। আইসিটি খাত সম্প্রসারণের জন্য নানাবিধ উদ্যোগ যথাযথ হলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য একটি বিশেষ দিকনির্দেশনার প্রয়োজন ছিল। স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য একটি ই- ব্যাংকিং বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা জনগণ প্রত্যাশা করেছিল। কেননা ই-ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যবসা করতে হলে খরচ বেশি পড়বে। আবার চলতি বছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হতে চলেছে। ১.৭৬ লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করে ১.৫০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আসলে এনবিআরের ব্যর্থতার দায়ভার ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ভ্যাট ক্রমশ বাড়ছে। অথচ প্রত্যক্ষ কর অনেক উত্তম। এখনও এনবিআরের কোন উন্নতি চোখে পড়ছে না। ই-ভ্যাট চালু হবে এটা ভাল কথা কিন্তু গ্রাহক যেন এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে অনুন্নয়নের খাতের ব্যয় বাড়ছে, যা শুভ লক্ষণ নয়। তবে কথা হলোÑ এ খাতে ব্যয় হ্রাসে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। নচেত দেশের অগ্রগতি তেমন আশানুরূপ বাড়বে না। আবার বিশ্বমন্দা দেখা দিলে যাতে কোন ধরনের অসুবিধা না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতির উর্ধগতি হ্রাস করাই চ্যালেঞ্জ হবে এবং প্রবৃদ্ধির হারও বাড়বে।
×