ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সাইফ আহমদ স্মরণে জাতীয় নাট্যশালায় ‘শেষ নবাব’

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

সাইফ আহমদ স্মরণে জাতীয় নাট্যশালায় ‘শেষ নবাব’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনেক গুণের সমন্বয়ের গড়ে ওঠা এক মানুষ সাঈদ আহমদ। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে সেতারে শিক্ষা নিয়েছিলেন সাঈদ আহমদ। এক সময় নিজের অর্কেস্ট্রা দলও গড়েছিলেন। ছিলেন লেখক, শিল্প-সমালোচক, সঙ্গীতজ্ঞ ও সরকারী কর্মকর্তা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় তাঁর নাট্যকার পরিচয়টি। বাংলা নাটকে আধুনিক নাট্যধারার বলে বিবেচিত এই নাট্যকার খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশ-বিদেশে। ষাটের দশকে বাংলা নাট্যচর্চায় যুক্ত করেছিলেন ইউরোপীয় এ্যাবসার্ড বা প্রতীকীবাদী নাট্যধারা। সোমবার স্মরণ করা হলো বরেণ্য এই নাট্যকারকে। তাঁর রচিত নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। শেষ নবাব নামের নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে। চারুনীড়ম থিয়েটার পরিবেশিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন গাজী রাকায়েত। নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে যৌথভাবে এই স্মরণের আয়োজন করে সাঈদ আহমদ ফাউন্ডেশন ফর কালচার এ্যান্ড আর্টস (সাফকা) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে নির্মিত নাটকে যুক্ত হয়েছে নতুন আঙ্গিক। প্রতিটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে গভীরভাবে। ঘষেটি বেগম থেকে শুরু করে মীর জাফর, রবার্ট ক্লাইভের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুণ অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে। সমকালের সামনে যেন মেলে ধরা হয়েছে অতীতকে। ঐতিহাসিক বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে পলাশী, সিরাজ ও সাম্রাজ্যবাদÑ এই তিনটি শব্দের মনতাজ ‘শেষ নবাব’। সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেকে একটি স্বাধীন ভূখ-ের একজন মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের নাম ‘সিরাজউদ্দৌলা। শেষ নবাব কিন্তু সবকিছু শেষ নয়। যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু। নাটকটিতে সে সব ঘটনা উঠে এসেছে। সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে রূপ দিয়েছে সালমান ডেভিড। মীর জাফর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহিদুল করিম, ঘষেটি বেগম চরিত্রে চামেলি সিনহা, জগৎশেঠ চরিত্রে মাসুদুর রহমান, রাজবল্লভ চরিত্রে আলমগীর হোসেন সাগর, রবার্ট ক্লাইভ চরিত্রে আল মোতাস্সিম, মোহনলালের ভূমিকায় শাহেদ মেহেদী, মীর মর্দান চরিত্রে মারুর মুর্তজা ও রায় দুর্লভের ভূমিকায় ছিলেন মাহমুদুল হক। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিখন রাহী, রোহান খান, ওমর ফারুক, সাইদুল হক, জাহিদ হাসান আখন্দ, সেলিম রেজা, রফিক নটবর, নূর ইসলামসহ অনেকে। বৈশাখী সন্ধ্যায় শেষ নবাব নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সাফকার সভাপতি নাট্যজন আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক মামুনুর রশীদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। প্রযোজনাটির প্রসঙ্গে নিদের্শক গাজী রাকায়েত বলেন, ‘যদি আর জন্মে আবার পল্লাশীতে আসার সুযোগ হয় তাহলে আবার আমি মীর জাফরকে বিশ্বাস করব’Ñ সিরাজউদ্দৌলার এই সংলাপটি আমাকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে নাটকটি নির্দেশনা দিতে। ঐতিহাসিক বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে পলাশী, সিরাজ ও সাম্রাজ্যবাদ এই তিনটি শব্দের মনতাজ হচ্ছে ‘শেষ নবাব’। সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেকে একটি স্বাধীন ভূখ-ের এক মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের নাম সিরাজ-উদ-দৌলা। এই নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে সাঈদ আহমেদের ‘শেষ নবাব’ নাটকটি নতুনভাবে আবিষ্কৃত হোক।’ জাতীয় যুবনাট্য উৎসব ॥ পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘আমরা আনিব রাঙা প্রভাত’ সেøাগানে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ৫ম জাতীয় যুবনাট্য উৎসব। সোমবার ছিল এই উৎসবের তৃতীয় দিন। এদিন একাডেমির দুইটি হলে আরও চারটি নাটকের প্রদর্শনী হয়। জাতীয় নাট্যশালার জাতীয় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ পরিবেশন করে প্রযোজনা ‘শেক্সপিয়র সপ্তক’ এবং শিল্পকলা একাডেমির ঢাকা বিভাগ পরিবেশন করে ‘মুল্লুক’। জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ঢাকার সেন্টার ফর বাংলাদেশ থিয়েটার পরিবেশন করে ‘খোয়াব’ এবং বগুড়ার আইডিয়া থিয়েটার পরিবেশন ‘দে ছুট’। আজ মঙ্গলবারও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দুইটি হলে থাকবে আরও চার নাটকের প্রদর্শনী হবে। নাটক উপভোগ করতে কোন দর্শনী বা পাস লাগবে না। চিত্রকর্ম প্রদর্শনী প্রকৃতির সন্ধানে ॥ জলরংয়ের ছবি আঁকতে ভালবাসতেন চিত্রশিল্পী এস এম সোহেল রানা। অকাল প্রয়াত এ শিল্পীর জলরংয়ে চিত্রিত চিত্রকর্ম থেকে বাছাইকৃত চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন শিল্পীর স্ত্রী সুমনা বিশ্বাস তনু। ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল প্রকৃতির সন্ধানে। চার দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হলো সোমবার।
×