ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দারা এখনও অন্ধকারে

নাজিম হত্যা তদন্তে দশ দিনেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

নাজিম হত্যা তদন্তে দশ দিনেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দশ দিনেও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক এবং অনলাইন অএ্যাক্টিভিস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যার তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকারীরাও চিহ্নিত হয়নি। সন্দেহভাজন হিসেবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে নাজিম হত্যার বিষয়ে তেমন কোন তথ্য মেলেনি। হত্যাকারীদের সম্পর্কে জানতে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বর্তমানে সিলেটে অবস্থান করছেন। তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় নাজিম হত্যার ঘটনা মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় ও জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার পরিণতির দিকেই মোড় নিচ্ছে বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটার দিকে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন (এলএলএম) কোর্সের বি সেকশনের ছাত্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নাজিম উদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গী তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানায়। পুলিশসহ অন্যান্য তদন্ত সংস্থাও নানা দিক পর্যালোচনা করে ধারণা করছে, নাজিম উদ্দিন সামাদ জঙ্গীদের পরিকল্পিত হত্যাকা-ের শিকার। যদিও মামলাটির তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির সূত্রাপুর থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে এ মামলায় আটক বা গ্রেফতার দেখানো হয়নি। যদিও অনেকেই নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। সন্দেহের তালিকায় থাকাদের নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত সূত্রগুলো বলছে, নাজিমের ফেসবুকে কি কি বিষয়ে লেখালেখি করতেন তা জানার চেষ্টা চলছে। এছাড়া নাজিম ফেসবুকে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাজিমের লেখনীতে আপত্তিকর কিছু ছিল কি না। থাকলে তা কি ধরনের লেখা সে সবের বিস্তর পর্যবেক্ষণ চলছে। এছাড়া পারিবারিক ও ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়েও গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। নাজিমের লেখনীর মাধ্যমে কারও সঙ্গে শত্রুতা হয়ে থাকলে, ওসব শত্রু কারা তা খুঁজে বের করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের আওতায় আনতে কাজ করছে। তারা হত্যাকা- সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে বর্তমানে সিলেটে অবস্থান করছেন। মামলাটির ছায়া তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাজিমকে মূলত সিলেটেই টার্গেট করা হয়েছিল। কিন্তু সেই টার্গেট মোতাবেক নাজিমকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। তবে নাজিম অনেক আগ থেকেই হত্যার টার্গেটে ছিল। সিলেটে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই নাজিম চলতি বছরের প্রথম দিকে ঢাকায় চলে আসে। এজন্য হত্যাকারীরা ঢাকায়ই নাজিমকে হত্যা করে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা সিলেট থেকে আসা। তারা নাজিমের চলাফেরার ওপর নজর রাখছিল। এমনকি হত্যাকারীদের নাজিমের বাসার পাশাপাশি কোন বাসায় ভাড়া নিয়ে বসবাস করাও বিচিত্র নয়। এজন্য নাজিমের বাসার আশপাশের মেসগুলোর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। হত্যাকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই যে নাজিমের ওপর নজর রাখছিল হত্যাকা-ের ধরনই তা স্পষ্ট করেছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই আলামতের ফলের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। গত বৃহস্পতিবার সূত্রাপুর থানাধীন ফরাশগঞ্জ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন ঈদি আমিন ও বিএম মুজিবুর রহমানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে নাজিম হত্যার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য মেলেনি। ডিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশনাল স্কোয়াডের সদস্যরা প্রযুক্তির ব্যবহার না করে সরাসরি দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিতান্তই প্রয়োজন হলে মোবাইল ফোনে আলাপ আলোচনা করছে সাংকেতিক ভাষায়, যা কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। এছাড়া জঙ্গী সংগঠনটির সদস্যরা আগের মতো গ্রেফতার হওয়ার পর আর অবলীলায় সব কিছু স্বীকার করছে না। এমনক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা রিমান্ডে ঠিকানা পর্যন্ত ভুল বলছে। আগে কাউকে হত্যার আগে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে পূর্বাভাস দিত জঙ্গী সংগঠনটি। এখন সে পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালায় না। এসবই তাদের নতুন কৌশল। ফলে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জঙ্গী সংগঠনটি এমন কৌশল অবলম্বন করায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর দিন দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল (৫০), লেখক এবং ব্লগার প্রকৌশলী তারেক রহিম (৪২) ও রন দীপম বসুকে (৪০) হত্যাচেষ্টা, একই দিন রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে (৪০) গলা কেটে হত্যা এবং গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছুরিকাঘাতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক, প্রকৌশলী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায় হত্যার দৃশ্যমান কোন কিনারা হয়নি। নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যার বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে বলেন, হত্যাকা-ের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অভিযান চলছে।
×