
ছবিঃ দৈনিক জনকণ্ঠ
ঈদের সকাল। চারপাশে কোরবানির ধূপ ছড়ানো শুভ্র এক আবহ। কিন্তু ঈদের সৌন্দর্য যেন মুহূর্তেই মলিন হয়ে যেতে পারে—যদি নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বর্জ্যের দুর্গন্ধ, যদি নগরবাসীর আনন্দ ডুবে যায় অস্বস্তির সাগরে।
এই চ্যালেঞ্জকে সগৌরবে গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঈদের দিন ভোর থেকেই রাজধানীর ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে শুরু হয়েছে কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম। যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এক বিশাল দল—কারও হাতে ঝাড়ু, কারও চোখে সতর্কতার দীপ্তি, কারও মনে শুধু একটাই ভাবনা: নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, এখনই, আজই।
এই কার্যক্রমের সরেজমিন পরিদর্শনে হাজির হলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাঁর পদচারণায় কলাবাগান শিশু পার্কসংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) যেন হয়ে উঠল তাৎক্ষণিক এক সিদ্ধান্ত-কেন্দ্র।
সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ডিএসসিসির প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া। সবার চোখেই ছিল দায়িত্বের দীপ্তি—এ যেন এক নীরব যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সৈনিকেরা।
"শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ," বললেন উপদেষ্টা। "সময়মতো অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়াবে, রোগ জীবাণুর আশঙ্কাও বাড়বে। তবে আমরা আশাবাদী—এই বছর ঢাকা দক্ষিণ ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণে সফল হবে। নগরবাসীর ঈদের আনন্দে কোনো বাধা আসবে না।"
এই আশাবাদের পেছনে আছে এক বিশাল জনশক্তি। প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী মাঠে কাজ করছেন ঈদের সকাল থেকেই। যেন এক একক মানবিক অপারেশন চলছে শহরজুড়ে। ব্যবহার হচ্ছে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ মোট ২০৭৯টি যানবাহন—যেন এক সচল, সংগঠিত যান্ত্রিক বাহিনী।
পরিচ্ছন্নতার এই কর্মযজ্ঞ তদারকিতে বসানো হয়েছে জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, চলেছে সার্বক্ষণিক নজরদারি। যেন প্রতিটি বর্জ্য অপসারণ একটি যুদ্ধজয়ের গল্প।
উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন তাঁর একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ডিএসসিসির সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ বহু নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা।
এই পুরো অভিযান যেন একটাই বার্তা দেয়—ঈদের আনন্দ শুধু কোরবানিতে নয়, তা যেন বিস্তৃত হয় চারপাশের পরিচ্ছন্নতায়, নগরবাসীর স্বস্তিতে।
এবারের ঈদে তাই কেবল পশু কোরবানিই নয়, এক অদৃশ্য দায়বোধও যেন উৎসর্গ করা হলো এই নগরের জন্য—যেখানে বর্জ্যের গন্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়ুক ঈদের সুবাস।
পৃথী