-
হেমন্তের গান
বদরুল হায়দার
অব্যাহত মনের লোড শেডিং এ তোমাকে আলাদা করা
কষ্টকর। সচরাচর স্বাভাবিকতায় পালাক্রমে আত্মহারা
হেমন্তের গানে গড়ো হৃদয় নগর।
শুল্কমুক্ত প্রেমের দাবিতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রেম
সহায়তার জীবন দেবতার কাছে নত হয় অভিমান।
দ্বৈত নীতিতে অবগতির মনগড়া রীতির অনুশীলনে
চূড়ান্ত মাকাল ফলে সবুরে মেওয়া ভুলে
ঐতিহ্য ঐশ্বর্য মিলে ভাগ করে ঘোলাজল।
আক্কেল ভুলের মক্কেলের মাসুলে আবেগে
কাঁদে দুঃখের না-বলা আগুন।
নদীমাতৃকতা ধ্যানে কার্তিক অগ্রহায়ণে মনে জাগে
শিহরণ। অরক্ষিত প্রেমের সড়কে হৃদয়ের পর্যবেক্ষণে
উজাড় হচ্ছে পণ।
সম্পর্ক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই।
মনের অববাহিকায় তুমি বাস করো। আমি
দায় স্বীকারের সত্য হাওয়ায় হেমন্তের
ঋতু বদলের মনে নিজেকে ভুলতে থাকি।
** নিষাদ
অদ্বৈত মারুত
ভেসে যেতে যেতে খড়কুটো, অপরিণত পাতা
তাকিয়ে দেখো সামনের জল যাচ্ছে ভাটিমুখে
এবং তুমিও ভেসে যাচ্ছ অযাচিত; চেতনাজুড়ে
পালকহীন ময়ূরের মতো দৃশ্যশূন্য এক মোরগ
আরেকটি বেদনা যেন আরেকটি ওড়ানো নিশান
মৃত প্রজাপতির মতো ঝুলে আছে ডালে নিশ্চুপ!
আর তুমি ধান সিদ্ধ চাতালের ধোঁয়া- ঈশ্বর হয়ে
উই খাওয়া দাঁতে নিত্য কেটে যাও চেতনার হাড়
ফলে গোরস্তানে শেয়ালের আর্তচিৎকার, শোরগোল
মোরগযুদ্ধ লেগে থাকে বর্ষাকালে, শীতে, বসন্তেও
সঙ্গবিমুখে বহুকাল থাকেনি যে সম্মুখে; সে-ও ভাসে
নির্মোক উজানজল টানে অতল অন্ধকারে তাকেও!
** রোদ পুকুরে
মিঠুল মাসুদ
রোদ পুকুরে ডুবলে শরীর
তোমার ঝরে জল
মায়ার শহর উত্তেজনায়
হারায় রিপুর বল।
বিরানভূমি যাচ্ছে পুড়ে
শান্ত হলে ধরা
গন্ধগোকুল কস্তুরি মৃগ
আমার পাড়ায় খরা।
বাধ্য হলে ঠোঁটের নগর
সর্বনাশে ধায়
ফিরলে ঘুঘু আপন ঘরে
কার কি আসে যায়?
** জলের বিবৃতি
সাইয়্যিদ মঞ্জু
অস্তগত সূর্যমুখে উঁকি দেয় অনাগত রাত
আকাশের গায়ে আজ, হাসবে-কি চতুর্দশী চাঁদ
অঝোর বৃষ্টিতে নাকি ঘুমাবদ্ধ সুখময় ফাঁদ
প্রকৃতির অবয়বে আঁকা আছে, নিশি ও প্রভাত।
তীরবর্তী ঢেউ আনে ক্রমাগত জলের বিবৃতি
যাবে কি যাবে না, আজ জলপুত গহীন সমুদ্রে
বাতাসের গতিবিধি দেখে নিও এই কালভদ্রে
আদম সুরত ধ্রুব তারা আনে মেঘের নিষ্কৃতি।
যতটা মুদ্রিত হয়ে জলকণা সুনীল শোভায়
চলন বলনে সবি অনুমেয় আপন শরীরে
বজ্রধ্বনি যত গর্জে আসছে- কি ততটুক বর্ষা-
হিসেবি হিসেব কষে অনিবার সমুদ্র অধ্যায়
স্রোতধারা ভরা-মরা টানপ্রাণ একান্ত গভীরে
প্রকৃতি দেখতে লাগে ধীরচোখ শোভন অপেক্ষা।
** ঘর থেকে দূরে
বঙ্গ রাখাল
বাবার অনিশ্চয়ের পথে আমি পরবাসী
দূরের করিডোরে আটকে আছে জীবন-
আমার বাড়ি ফেরা হলো না-
একটি শিশু ধরে আছে হাত
অনাগত মানুষের আগমনে ফিরে পাই-
বংশপরম্পরা-চেতনায় বায়ান্ন; বকুলের ঘ্রাণ
আমরণ দাঁড়িয়ে আছে বুকে- পিতা দূরে
চেয়ে আছে পথ- ছোট পাখি বনে থাকে
মনে করে বাসা- আমিও দূরে ঘুরি; সব ছেড়ে আশা...
বুকের হাপরে হাঁসফাঁস করে- ফিরে আসা সব দিন
পোড়ামন খুঁজে ফেরে সোনার বাসরÑ মুগ্ধতার ঋণ...
** পাতাসমগ্র ও বাংলাদেশ
শিউল মনজুর
প্রকৃতির ভুবন ছুঁয়ে জেগে ওঠা, জামদানি পালকের এই নান্দনিক মৌসুমটিও আমাকে আগ্রহী করে তুলে না- নতুন কোনো প্রেমে নতুন কোনো গানে। বাতাসে উড়ে বেড়ানো ঘুরে বেড়ানো রক্তবর্ণ কিংবা হলদেটে পাতাগুলো যদিও ক্ষণিক মুগ্ধতা ছড়িয়ে আমাকে কিছুক্ষণ ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখে, তবু ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত শরতের কাশবনে শুভ্রতার আঁচল উড়িয়ে যে নদীটি কোমর বাঁকিয়ে ভারতবর্ষের সকল সৌন্দর্য নিয়ে সমুদ্র অবগাহনের পথে ছুটে গেছে, তাকেই আমার মনে পড়ে স্মৃতিতে, বিস্মৃতিতে, জীবনের গল্পে ও ভ্রমণে! যদিও পাতাঝরা ঋতুটি কখনো কখনো মনে করিয়ে দেয়, সৃষ্টিকর্তার তুলি সত্যিই অনন্য সুন্দরের প্রতিভূ এবং একমাত্র তিনিই আলোময় শিল্পময়। তবে শেষ পর্যন্ত, মেরীল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটন ডিসির পথে ঘুরতে ঘুরতে বৃক্ষে বৃক্ষে রঙতুলিতে আঁকা ছবি ও বাতাসের সঙ্গে পাতাসমগ্রের মিতালী দেখতে দেখতে যাযাবরের মনোবেদনা সঞ্চয় করে দেখি, দুর্দান্ত প্রতাপে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে আমারি ষড়ঋতুর বাংলাদেশ।