ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্ত্রীকে হারিয়েও হারাননি প্রেম: মোস্তফার কাহিনী

রফিকুল ইসলাম রফিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৪, ৯ জুন ২০২৫

স্ত্রীকে হারিয়েও হারাননি প্রেম: মোস্তফার কাহিনী

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চান্দামারী গ্রামের বাসিন্দা এটিএম মোস্তফা কামাল। বয়স ৭৫ বছর। স্ত্রী রেখা বেগমের মৃত্যুর পর পার হয়েছে দীর্ঘ ১৯ বছর, কিন্তু স্ত্রীর স্মৃতি থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্যুত হননি তিনি।

২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর ৪৩ বছর বয়সে মারা যান রেখা বেগম। সেই থেকে স্বামীর জীবনে শুরু হয় শূন্যতার অধ্যায়। ঘরের ঠিক প্রবেশপথের পাশে, রাস্তাঘেঁষা স্থানে স্ত্রীর কবর দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কবরের পাশেই এখন মোস্তফার দিনের বড় একটি সময় কাটে।

প্রায় দুই দশক ধরে স্ত্রী রেখা বেগমের কবরের পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ ও পত্রিকা পাঠ করেন তিনি। কখনো নীরবে বসে থাকেন, কখনো স্মৃতিচারণে ডুবে যান।

এটিএম মোস্তফা কামাল রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ইংরেজি শিক্ষক। ২০০৯ সালে তিনি শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
 

পারিবারিক সূত্র জানায়, তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত মধুর ও ভালোবাসায় পূর্ণ। মোস্তফা কামাল ও রেখা বেগম কখনো আলাদা হয়ে একটি দিনও কাটাননি। স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ছিল দৃষ্টান্তস্বরূপ। রেখা বেগম স্বামীর প্রতি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, আর মোস্তফাও ছিলেন স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত।

এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে—ছেলে রাজীব ফেরদৌস শুভ্র এবং মেয়ে রুবাইয়া সুলতানা। উভয়েই বিবাহিত।

পুত্র রাজীব ফেরদৌস শুভ্র জানান, “মায়ের মৃত্যুর ১৯ বছর হয়ে গেলেও বাবা কোনো দিন তাকে ভুলতে পারেননি। মনে হয়, যেন কয়েক দিন আগেই মা মারা গেছেন। বাবা যদি বাইরে কোনো কাজে যান, তাহলে দ্রুত কাজ সেরে আবার মায়ের কবরের পাশে ফিরে আসেন। রাত জেগে নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, মায়ের জন্য দোয়া করেন।”

উপজেলার নওদাবস উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোবাশ্বের আলম লিটন বলেন, “স্যার তো তাজমহল নির্মাণ করতে পারেননি, কিন্তু স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার এমন উদাহরণ আজকাল খুব কম দেখা যায়।”

নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে এটিএম মোস্তফা কামাল বলেন, “আমি জানি না, অন্য স্বামীরা স্ত্রীর মৃত্যুতে কেমন করেন। কিন্তু রেখা বেগম মারা যাওয়ার পর প্রতিটি দিন ও রাত আমার কাছে অপূর্ণ লাগে। তাকে আমি ভুলতে পারি না। মৃত্যুর পর থেকে ফজরের নামাজের আগে ও পরে এবং অন্য সময় মিলিয়ে ১২৯ বার কোরআন খতম করেছি তার জন্য। আমি সবসময় আল্লাহর কাছে তার জান্নাত কামনা করি।”
এ যেন জীবন্ত এক প্রেমগাঁথা। যেখানে নেই বাহ্যিক জাঁকজমক, নেই কোনো সৌধ কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ। তবুও এটিএম মোস্তফা কামালের হৃদয়ে নির্মিত হয়েছে ভালোবাসার এক তাজমহল—অবিচল, গভীর ও চিরন্তন।
 

Jahan

×