ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গ্রামের টং দোকান

আশরাফুল ইসলাম অন্তর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাগমারা, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১০ জুন ২০২৫

গ্রামের টং দোকান

গ্রামের এক কোণে, পুরোনো আমগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটা টং দোকান। টিনের ছাউনি, বাঁশের বেঞ্চ আর কাঠের তাকজোড়া এই দোকানটা শুধু চা বিক্রি করে না-এটা যেন এক জীবন্ত গল্পঘর, যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন কাহিনি বুনে চলে নিঃশব্দে।

এই টং দোকানটাই ছিল গতকাল বিকেলের সাক্ষী এক রঙিন আড্ডার। তিন ঘণ্টা ধরে চলেছিল হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতি আর স্বপ্নের মেলবন্ধন। আলী চাচার হাতে বানানো ধোঁয়াওঠা লাল চায়ের কাপে জমেছিল জীবনের অজস্র রঙ।

বসে ছিলেন গ্রামের নানা বয়সী মানুষ-কেউ কৃষক, কেউ কলেজপড়ুয়া, কেউবা শহরফেরা এক ক্লান্ত কর্মী। প্রত্যেকেই সঙ্গে করে এনেছিলেন নিজ নিজ জীবনের টুকরো গল্প। এক কাপ চায়ের সঙ্গে কেউ ভাগ করে নিলেন ছোটবেলার দুষ্টুমির কথা, কেউ মনের ভেতরের চাপা প্রেম, আবার কেউ গল্প করলেন রাজনীতি আর বাজারদরের উত্থান-পতনের।

দোকানজুড়ে কখনো উঠছিল হাসির খিলখিল, আবার হঠাৎ করেই কেউ গম্ভীর স্বরে বলে উঠছিল

এই রাস্তাটা পাকা হলে অনেক সুবিধা হতো...
আরেকজন বলে উঠছিল,
এইবার ধানের ফলন ভালো হইছে রে ভাই!

কেউ আবার বলে ওঠে আর তিন দিন আছি, তারপর জাব শহরে।

চায়ের কাপ বদলাচ্ছিল হাত থেকে হাতে, আর সঙ্গে বদলাচ্ছিল আলোচনার সুর। সেই টং দোকান যেন হয়ে উঠেছিল এক খোলা সভাকক্ষ, যেখানে কথা বলার জন্য মাইকের দরকার হয় না, প্রয়োজন শুধু একটা চায়ের কাপ আর কিছু আপন মানুষের উপস্থিতি।

সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে একে একে সবাই উঠে পড়ল, কিন্তু রেখে গেল কিছু না বলা কথা, কিছু অসমাপ্ত গল্প, আর একরাশ স্মৃতি। টং দোকানের বাঁশের বেঞ্চটা আবার নীরব হয়ে গেল, কিন্তু তার কাঠে-কাঠে থেকে গেল মানুষের গল্পের গন্ধ।

এই টং দোকানগুলোই তো গ্রামের আত্মা-যেখানে প্রতিদিন চায়ের কাপে বুদবুদের মতো উঠে আসে জীবনের আসল সৌন্দর্য।

চা শেষ, আড্ডা শেষ-তবু গল্প থেকে যায়।

Jahan

×