ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিবরামপুরের শতবর্ষী ছ্যাঁকা রুটির জাদু আজও অমলিন

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,সিরাজদিখন মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৯ জুন ২০২৫

শিবরামপুরের শতবর্ষী ছ্যাঁকা রুটির জাদু আজও অমলিন

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শিবরামপুর হাটে প্রতি শনিবার সকালে শুরু হয় এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। কেউ আসেন সবজি কিনতে, কেউ গরু দেখতে, আর কেউ—শুধু একটা রুটির কামড় খেতে। নাম তার ‘ছ্যাঁকা রুটি’। শত বছরের পুরোনো এই হাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখন এই ছ্যাঁকা রুটিই।

স্থানীয়রা বলেন, শিবরামপুর হাটে এসে ছ্যাঁকা রুটি না খেলে আসাই বৃথা। বিশাল আকৃতির, পাতলা খোসা আর নরম ভিতরের এই রুটি এখন শুধু খাবার নয়, হয়ে উঠেছে এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

ছ্যাঁকা রুটি তৈরি হয় লোহার পাতের উপর, একেবারে তেল ছাড়া পদ্ধতিতে। চালের গুঁড়া, আটা, পানি ও লবণ মিশিয়ে আটা তৈরি করে একপিঠে রুটি পোড়ানো হয় উত্তপ্ত চুলায়। রুটি হয় প্রায় ১৫০–১৬০ গ্রাম ওজনের, ব্যাসে অনেক বড়, আর খেতে মচমচে ও নরমের মিশ্রণ।
রুটি খাওয়া হয় সাধারণত নারকেল-চিনির হালুয়া, মিষ্টি বা ডালের সঙ্গে। কেউ কেউ শুধু চায়ের সঙ্গেই উপভোগ করেন।

হাটে ছ্যাঁকা রুটি বিক্রি করেন স্থানীয় ৩–৪টি পরিবার, যারা প্রজন্ম ধরে এই কাজ করে আসছেন।
এক প্রবীণ রুটি প্রস্তুতকারী বলেন “আমার দাদার আমলেও এই রুটি বানানো হতো। এখন ছেলেরা করছে। হাটে না গেলে মনই টেকে না।”জনপ্রিয় দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রহিম বেকারি’, ‘জাহানারা রুটি ঘর’ প্রভৃতি। তারা প্রতিবার একই জায়গায় বসেন, একপাশে রুটি বানানোর তাও, আর পাশে দীর্ঘ লাইন।

শিবরামপুর হাটে প্রতি শনিবার আসে আশেপাশের সিরাজদিখান, দোহার, নবাবগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও লোকজন। অনেকেই শুধুই এই রুটি খাওয়ার জন্য আসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।
হাটের মাঠের পাশে অনেককেই দেখা যায়, রুটির সঙ্গে হালুয়া বা নারকেল চিনি মিশিয়ে খেতে। স্থানীয়দের ভাষায়, “এই রুটির স্বাদ যারা একবার পেয়েছে, তারা আর ভুলতে পারে না।”

ঢাকা থেকে গুলিস্তান-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বৌলতলী বা বালিগাঁও পর্যন্ত গিয়ে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে হাটে যাওয়া যায়।
একসময় এই হাটে ব্যবসায়ীরা আসতেন ইছামতী নদীপথে, এখনো স্থানীয়রা ছোট নৌকায় চলাচল করেন।

যেখানে আধুনিক খাবার আর ফাস্টফুডের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ স্বাদ, সেখানে শিবরামপুর হাটের ছ্যাঁকা রুটি এক নীরব প্রতিবাদ। এটি শুধু একটি রুটি নয়, এটি একটি ইতিহাস—যার প্রতিটি কামড়ে জেগে ওঠে বাংলার হাটবাজার, নদী, আর মানুষ।

Jahan

×