ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

একজন তারামন বিবি

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

একজন তারামন বিবি

সময়টা মধ্য দুপুর সবাই খেতে বসেছে, সারা দিনের ক্লান্ত যোদ্ধারা। তারামনকে পাকিস্তানী সেনাদের কেউ আসছে কিনা তা দেখার জন্য বলা হলো। তারামন সুপারি গাছে উঠে দূরবীন দিয়ে চারদিকে লক্ষ্য রাখছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, পাকবাহিনীর একটি গান বোট তাদের দিকে আসছে। সবার খাওয়া বন্ধ। দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে এ্যাকশনের অপেক্ষা করতে লাগলেন সবাই। তারামন তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। সেদিন তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এর পর তারামন অনেক যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাক বাহিনী আক্রমণ করেছে, তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতি বার বেঁচে যান। তারামন বিবি। একটি বীরত্বপূর্ণ নাম। একই সঙ্গে একটি ইতিহাস। জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। বাবা আবদুস সোবাহান, মা কুলসুম বেওয়া। তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন নানা ভূমিকায়। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু এই মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় ১৯৯৫ সালে। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন । তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্রচালনা শেখান। পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই বীর নারী বিজয়ের মাসের প্রথম দিনেই কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হক একটি বই লিখেছেন ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল তারামন বিবি। তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
×