প্রকৃতির পালাবদলে বইছে হিমেল হাওয়া। চারদিকে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আর এ সময়টাতে চলে নিজেকে মেলে ধরার প্রস্তুতি। পোশাক আশাক সাজ সজ্জায় অন্য রকম ছোঁয়া লেগে যায়। চলাফেরা সব কিছুতেই উৎসবের ছটা যেন লেগেই থাকে। ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতুই পরিবর্তিত হয় আপন মহিমায়। তারই হাত ধরে প্রকৃতিতে খেলা করছে হেমন্তের হিমেল বাতাস। জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। যে কারণে বাধ্য হয়েই পরিবর্তিত হয় দৈনন্দিন চলাফেরা এবং যাপিত জীবন। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রস্তুতি নেয়া হয়। পরিবর্তনের এ তালিকায় পোশাক অন্যতম। অর্থাৎ সময়োপযোগী আরামদায়ক পোশাকের দিকে নজর সবার। কারণ পোশাক যদি আরামদায়ক না হয় তাহলে আনন্দটাই মাটি হবে। সৃষ্টি হবে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির। অতএব আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক না পরলে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। যে কারণে ঋতুভিত্তিক পোশাক মানুষের এখন প্রথম পছন্দ। ফ্যাশন হাউসগুলো এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। একটা সময় ছিল যখন এদেশের মানুষ উৎসব কিংবা বড় কোন অনুষ্ঠান ছাড়া ফ্যাশন হাউসগুলোতে ভির জমাত না। তবে প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গেছে। বাঙালী এখন ফ্যাশন সচেতন জাতি হিসেবে স্বীকৃত। ঋতুভিত্তিক পোশাক এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডের পরিচিত রূপ। কোন ঋতুর সঙ্গে কোন পোশাকটি মানানসই তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা হয়। আর হবেই বা না কেন। বিশ্ব ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের ফ্যাশন জগত। আর এ পথ চলায় ফ্যাশন হাউসগুলোও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ফ্যাশন হাউসগুলো সবসময় সচেষ্ট থাকে ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা মোতাবেক পোশাক সরবরাহ করতে। যখন যে ঋতু বা উপলক্ষ সামনে এসে দাঁড়ায় সে ঋতু কিংবা উপলক্ষ নিয়েই অগ্রিম প্রস্তুতি সেরে ফেলে তারা। যে কারণে সাধারণ মানুষেরও নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লাগে না। ফ্যাশন হাউসের বদৌলতে ঋতুভিত্তিক পোশাকের অগ্রিম খবর পেয়ে যায়। যার ফলে ঋতুভিত্তিক পোশাকের প্রস্তুতি আগে থেকেই সেরে রাখা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব পোশাক শুধু গতানুগতিক ধারাতেই থাকে না বরং নিত্যনতুন ফ্যাশন যোগ করা হয়। অনেক সময় পুরনো কিছু ফ্যাশনকে নতুন রূপদান করে আরও বেশি আধুনিক করে তোলা হয়। তেমনি নতুন এবং পুরাতন ডিজাইনের সংমিশ্রণের একটি পোশাক বর্তমান তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পোশাকটি হচ্ছে লেহেঙ্গা। নব্বই দশকে লেহাঙ্গা ফ্যাশনের তুঙ্গে ছিল। তবে সেই লেহেঙ্গা এই লেহেঙ্গা থেকে একটু ভিন্ন। তখনকার লেহাঙ্গা জরি কিংবা ভারি কাজের সমন্বয়ে কোমরের নিচ থেকে ঘাঘড়ার মতো করে বড় একটা রাউন্ড শেপ ছিল। অনেক সময় লেসফিতা দিয়ে ডিজাইন করা হতো। আলাদা করে দুটো পার্ট থাকত। উপরের টপসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নিচের ঘাঘড়ার ডিজাইন করা হতো। দীর্ঘদিন ঘাঘড়া তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল। বেশ কিছুদিন ঘাঘড়া ফ্যাশন ট্রেন্ডের বাইরে থাকলেও এখন নতুন রূপে ধরা দিয়েছে তরুণীদের সামনে। ডিজাইনে এসেছে বৈচিত্র্য। এখন আলাদা পার্ট করে ঘাঘড়া তৈরি হয় না। এক ছাঁটের পাঞ্জাবির মতোই একটা লেহাঙ্গা। এতে যোগ করা হয়েছে কালার এবং ডিজাইনের ভেরিয়েশন। করে তোলা হয়েছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এ প্রসঙ্গে বিউটি এক্সপার্ট এবং ফ্যাশন ডিজাইনার আফরোজা কামাল জানান নতুনত্ব বরাবরই মানুষকে আকৃষ্ট করে। ঘাঘড়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পোশাকটি বাজারে আসার পর থেকেই তরুণীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। পোশাকটি অনেকটা এক ছাঁটের পোশাকের মতোই। একটা কালার বেজ কাপড়ের উপর ডিজাইন করা হয়ে থাকে ঘাঘড়া। আর এ সময়টায় ঘাঘড়া বেশ মানানসই। ডিজাইনের কোন শেষ নেই। যে যেভাবে সেটাকে রাঙিয়ে তুলতে পারে। অর্থাৎ লেস কিংবা চুমকি লাগানো অথবা অন্যান্য ডিজাইনে সমৃদ্ধ করা সম্পূর্ণটাই নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। আবার রেডিমেড বহু ধরনের ডিজাইনের ঘাঘড়া পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কাপড়। সাধারণত এই সময়ে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিক, জয়সিল্ক, জর্জেট এবং সিল্ক। অন্যান্য সময় সফট সিল্ক ব্যবহার করা হলেও এই শীতে সিনথেটিক, জর্জেট এবং সিল্ক দারুণভাবে মানিয়ে যায়। যা পোশাটিকে করে তোলে আরামদায়ক। ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা। অর্থাৎ ক্যাজুয়াল, এক্সক্লুসিভ সব ধরনের প্যাটার্নেই পাওয়া যাচ্ছে ঘাঘড়া। যার ফলে ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই অনায়াসেই মানিয়ে যায় ঘাঘড়া। ডিজাইন এবং প্যাটার্ন ভেদে একেকটা ঘাঘড়ার দাম পড়বে ২৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও পোশাকটি মাত্র বাজারে আসা শুরু করেছে তার পরেও বিভিন্ন ফ্যাশর হাউসে দেখা মিলবে ঘাঘড়ার। তার মধ্যে আড়ং, আলমিরা, থ্রি উইশেস, ওটু, ওয়ারাহ্ অন্যতম। নতুনকে স্বাগত জানানোর স্পৃহা সবার। যে কারণে নতুন ফরমেটের ঘাঘড়া এখন তরুণীদের প্রথম পছন্দের পোশাক। যা ফ্যাশন ট্রেন্ডে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
ছবি : রুদ্র ইউসুফ
মডেল : তৃষি, শার্লিন ও আয়াত
পোশাক : জলছাপ বাই নাজমুন
মেকআপ : ওমেন্সডল
শীর্ষ সংবাদ: