ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গল্প ॥ বনের বন্ধু

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গল্প ॥ বনের বন্ধু

বনজুড়ে বিরাট উৎসব। বনের রাজা সিংহ ও তার মন্ত্রী শেয়াল বন্ধুত্ব করছে পাশের জঙ্গলে। দুটো জঙ্গলের মাঝে বিরাট এক নদী। রাজা আজ বেশ খুশি। চারদিকে খাবারের গন্ধ। শুয়ো পোকার পোলাও, ব্যাঙের ছাতার সালাদ, শামুকের স্যুপ, কাঁকড়ার চপ, টিকটিকির লেজ ভাজা, শেওলার ঠাণ্ডা পানীয় আরও কত কি! সিংহের তো কখন থেকেই জিভের জল পড়ছে। তার এক বাঘ বন্ধু আছে। সে নাকি পথ ভুল করে একবার লোকালয়ে চলে যায়। যে বাড়িতে ঢুকেছিল সেটা ছিল এক বিয়ে বাড়ি। কত রকমের খাবার যে হতে পারে তা তো জানাই ছিল না। বাঘ সেখান থেকে দেখে এসেছিল। সেই গল্প একদিন সিংহের কাছে বলেছিল। সেই থেকেই সিংহের খুব ইচ্ছা তার এই রাজত্বে এমন করে উৎসব হবে। আজ তার ইচ্ছে পূরণ হলো। ছোট্ট খরগোশ দৌড়ে এলো। কুমিরগুলো দল বেঁধে চলে এসে কুমিরের পিঠে চড়েই নদী পার হয়ে তারা পাশের জঙ্গলে যাবে। সেখানেই বিয়ে। কিন্তু মন্ত্রী শেয়াল কোথায়, তাকে তো পাওয়া যাচ্ছে না চারদিকে ছুটোছুটি। শেয়ালের বড্ড লোভ খাবারের ওপর। খাবার দেখলে আর হুঁশ থাকে না। খরগোশ ছুটে চলল। পেয়েছি পেয়েছি। শেয়াল মামাকে পেয়েছি। শেয়াল তো বসে বসে খাচ্ছে। টপাটপ করে কাঁকড়ার চপ খেয়ে নিচ্ছে। সেই কথা শুনে সিংহের খুব রাগ হলো। ওদিকে সকালে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। এখন রোদ উঠছে। আজই খেকশেয়ালের নতুন বন্ধু হবে। এমন সময় কিনা শেয়াল বসে বসে খাচ্ছে! সিংহ গর্জন করতে করতে এলো। শেয়ালের কানে ধরে তাকে নিয়ে গেল। কুমিরের পিঠে করে সবাই পার হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। হাতি কি করে পার হবে? হাতির ভার তো কুমির নিতেই পারবে না। হাতিদের মন খারাপ। শেষে এক বুড়ো হাতি এসে বলল- সবাই থাক, আমরা থাকি। আমরা জঙ্গল পাহারা দিব। সবাই চলে গেলে জঙ্গল পাহারা দেবে কে? অন্য হাতিরা চুপচাপ বুড়ো হাতির কথা মেনে নিল। সবাই চলল বন্ধু দেখতে। সেখানে অনেক আয়োজন হয়েছে ব্যাঙের নাচ, পাখিদের গান, অনেক খাওয়া- দাওয়া হঠাৎ যেন শোনা গেল হাতি ডাকছে তাদের। একটা হরিণ নদীর পাড়ে এসে দাঁড়াল। ঐ তো হাতিদের দেখা যাচ্ছে। এত দূর থেকে কি যে বলছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। কুমিরকে ডাকল তখন হরিণ। -কুমির, তুমি দেখে এসো তো ওপারে কি হচ্ছে? কুমির তাড়াতাড়ি সাঁতরে গেল ওপারে। - কি হলো, বুড়ো হাতি? ডাকছ কেন? -জঙ্গলে মানুষ এসেছে। তাড়াতাড়ি সবাইকে ডাক চলে আসতে। তারা গাছ কেটে ফেলছে আমাদের থাকার জায়গা ভেঙ্গে ফেলছে। কুমির এপারে এসে হরিণকে সব কথা বলল। হরিণ দৌড়ে গেল। সবাইকে বলল- তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে। তাদের বাড়ি-ঘর সব ভেঙ্গে ফেলছে মানুষেরা। সিংহ খুব চিন্তায় পড়ে গেল। শেয়াল মুখ ভার করে বসে পড়ল। সে ভাবছে-বন্ধু তো মন খারাপ করবে। আর এই যে এত খাওয়া-দাওয়া তার কি হবে? বন্ধুত্ব হলে খাওয়া হবে। এখন কি করা? সিংহ বলছে- তোমরা কয়েকজন এখানে থাক আর বাকিরা আমার সঙ্গে জঙ্গলে চল। কিন্তু বাকিরা ভাবছে- মন্ত্রী শেয়ালের অনেক বুদ্ধি। সে না গেলে কি করে হবে? শেয়াল বলল- আমিও যাব। আগে মানুষদের সেখান থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর সব। সবাই এক এক করে আবার আগের মতো কুমিরের পিঠে করে নদী পার হতে থাকল। আর বানরগুলো গাছ থেকে গাছে লাফাতে লাফাতে চলতে থাকল। সবাই পৌঁছাল তাদের জঙ্গলে। নদীর পাড়ে তো সব ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু দূরে ঠুক ঠাক শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন গাছ কাটছে। সিংহ তার দলকে কয়েকটি ভাগ করল। সবাইকে বলল- শোনো সবাই, আমরা কাউকেই মেরে ফেলব না। শুধু ভয় দেখাব যেন ওরা এখানে আর না আসে। এটা আমাদের জঙ্গল। -ঠিক আছে, সিংহ রাজা। আমরা আপনার কথা মতোই কাজ করব। -সবাই বলল। -আর একটি কথা, শেয়াল মন্ত্রী থাকবে সবার সামনে সে যা বলবে তোমরা তাই করবে। -সিংহ বলল। এবার সবাই চলল জঙ্গল বাঁচাতে। ঐ দিকে পাখিরা আকাশে পাগলের মতো উড়ছে। তারা ঈগলকে আনতে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে জুটেছে অনেক অনেক চিল। কিন্তু ঈগলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। আজ হয়ত শিকারের জন্য ঈগল অনেক দূর চলে গেছে। বাকি পাখিরা আর চিলের দল ফিরে এলো। ওদিকে সন্ধ্যে হয়ে গেল। মানুষেরা মশাল জ্বালিয়ে ঐ তো দূরে দেখা যাচ্ছে। সবাই সেই মশাল লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে যেতে লাগল। বনের সকল প্রাণী গর্জন করতে লাগল। অদ্ভুত শব্দ করতে লাগল মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু মানুষ তো যাচ্ছেই না। ধীরে ধীরে গাছ কাটার শব্দ বাড়তে লাগল। শেয়াল সবাইকে বলল- তোমরা সামনে যাও, আর এমনভাবে ভয় দেখাও যেন মেরে ফেলবে। তখন অবশ্যই মানুষ চলে যাবে। বানরগুলো গাছে গাছে লাফিয়ে চলতে থাকল। ছোট বানরগুলো মানুষের ওপর লাফিয়ে পড়তে থাকল। এবার মানুষ ভয় পেয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু একি! এ তো আগুন জ্বলছে। মশালটা শুকনো গাছে পড়ে গিয়ে এই আগুন লাগল। ওদিকে শুকনো পাতায় আগুন ধরে যাচ্ছে। হাতিরা সামনের নদী থেকে জল এনে তাদের শুঁড় দিয়ে ছিটিয়ে দিতে থাকল। বানরগুলো কাচা পাতা এই আগুনের ওপর দিল। আগুন নিভানো গেল। সবাই এবার খুব ক্লান্ত। দুপুরের রান্না করা খাবার সবাই পেটভরে খেল। ক্লান্তিতে সকলের চোখে ঘুম এসে গেল। ভোরে পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙল সবার। খরগোশ এসে খবর দিল। সিংহ সবাইকে ডাকছে। সবাই কাজ ফেলে বনের মধ্যে গেল। সবাই সিংহকে ঘিরে বসেছে। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে সিংহের কথা শুনছে সিংহ বলছে- দেখো বন্ধুরা, গতকাল আমাদেরও এই জঙ্গলের ওপর অনেক বড় বিপদ এসেছিল। কিন্তু সবার চেষ্টায় আমরা সেই বিপদ কাটিয়ে উঠেছি। তোমরা সবাই যদি এরকমভাবে সব সময় একসঙ্গ থাকো, সবার উপকার কর তবে আমাদের ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। আর এই জঙ্গল, গাছ-পালা বাঁচতে পারবে। -আর একটি কথা। আমি হরিণকে পাশের জঙ্গলে পাঠিয়েছি। আজ আমার মন্ত্রী খেকশেয়ালের বন্ধু আসবে। এই কথা শুনে সবাই অনেক খুশি। সবাই আনন্দে নাচতে থাকল। সবার আনন্দ দেখে সিংহও খুব খুশি। খাবারের আয়োজন হয়েছে। সবাই এসেছে পাশের জঙ্গল থেকে। এদিকে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সবাই বড় বড় গাছের পাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে পাখিরা গান গাইছে। খেকশেয়ালের বন্ধু এলো ছাতা মাথায় দিয়ে, খুশিতে নাচছে সবাই গান গাইছে টিয়ে।
×