
প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার লক্ষ্যে চাকরি
প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার লক্ষ্যে চাকরির জন্য যারা আবেদন করেছেন তার মধ্যে অনেকেই প্রস্তুতি নেয়ার ও চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, কী পড়বেন আর কী বাদ দেবেন তা বুঝতে পারছেন না। এমনকি বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষার তারিখ চলে আসে। তখন স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা খারাপ হয়ে যাবে ভালো প্রস্তুতির অভাবে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনেকে ২-৩ বার ভাইভা দিয়েও চাকরি পাননি। এমন অনেক নজির আছে। এর মূল কারণ বহু নির্বাচনী (গঈছ) প্রশ্নে ভালো নম্বর তুলতে না পারা। মানে কোনোভাবে পাস করা যাকে বলে। চাকরি পেতে হলে এমসিকিউ প্রশ্নে বেশি নম্বর পেতে হবে। এটাই মূল পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারলে ভাইভা মোটামুটি হলেও চাকরি পাওয়া সম্ভব।
মূল কথা, যেভাবে একদম শূন্য থেকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবেন-
ধাপ-১
প্রথমে আপনি প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বাজারে প্রচলিত সহায়ক বইতে দেয়া টপিকগুলো কমপক্ষে ৩ বার ভালো করে পড়ুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে শেষ করতে পারলে আপনার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেড়ে যাবে এবং পরীক্ষা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা অনেকাংশেই কেটে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার এইজন্য পড়তে হবে যে, যেন পরীক্ষায় কমন পড়লে সঠিক উত্তর মিস না হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ প্রশ্নই কমন টপিক থেকে আসে। কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হওয়ার কারণে অনেকে ভুল উত্তর দিয়ে আসে। আর পরীক্ষায় পাশ না করতে পারার আফসোস থেকে যায়! আফসোস করে আর বলে, ‘ইশ! এতো সহজ প্রশ্ন এলো তারপরও ভালোভাবে উত্তর করতে পারলাম না! প্রশ্ন কিন্তু সবসময় সহজই হয়, দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু পরীক্ষার আগে উল্টা-পাল্টা সব পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর মাথা গুলিয়ে যায়। তখন প্রশ্ন কঠিন মনে হয়। আর পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর আবার সেই প্রশ্নই অনেক সহজ মনে হয়।
ধাপ-২
এরপর বিসিএস প্রিলির ৪২তম-৩৫তম পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়বেন (তবে ৪২তম-১০তম পর্যন্ত পড়তে পারলে আরও ভালো হয়)। কারণ, বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। প্রতিদিন ২-৩টি করে নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করুন
ধাপ- ৩
পরীক্ষার আগে বাসায় ঘড়ি ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন আপনি কত পান। আপনি যে মডেল টেস্ট বইটির সহায়তা নিচ্ছেন তা বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে বাংলা- ২০, ইংরেজি- ২০, সাধারণ- ২০, গণিত- ২০ এভাবে আলাদা করে দেয়া থাকলে। কারণ, মূল পরীক্ষায় বর্তমানে এই প্যাটার্নে প্রশ্ন হয়। দেখে নেন কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন। যে বিষয়ে কম নম্বর পাবেন, পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন।
ধাপ-৪
আপনি মডেল টেস্টগুলো ৫০ মিনিট সময় ধরে দিন। পরীক্ষার হলে যদিও সময় ৬০ মিনিট, সেখানে কিছু সময় সিস্টেমের জন্য নষ্ট হয়। তাছাড়া, পরীক্ষার হলের পরিবেশ আর বাসার পরিবেশ-পরিস্থিতি এক নয়। তাই বাসায় আরেকটু কম সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। অন্তত ১০টি মডেল টেস্ট দেয়ার পর উত্তরপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন আপনি মোট কত নম্বর পান, নেগেটিভ নম্বর মাইনাস করার পর। যদি আপনি দেখেন মডেল টেস্টে ৭০ বা তারও বেশি নম্বর পান, তাহলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে ধরে নেবেন এবং পরীক্ষায় ভালো করবেন বলে বিশ্বাস রাখা যায়।
ধাপ-৫
যদি মডেল টেস্টে ৫০ থেকে ৬৯ নম্বর পান তাহলে ধরে নিন প্রস্তুতি মোটামুটি হয়েছে। চাকরি পেতে হলে আরও ভালো করতে হবে। আর যদি মডেল টেস্টে ৫০ নম্বরের কম পান, ধরে নিন আপনার প্রস্তুতি অনেক খারাপ। মডেল টেস্টে যে সাবজেক্টে কম নম্বর পাচ্ছেন সেখানে জোর দেবেন, বেশি বেশি খাতায় লিখে লিখে পড়বেন।
ধাপ-৬
পড়ার টেবিলে বসে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে পড়ায় মনোযোগ আসবে এবং পড়া মনে বেশি থাকবে।
এভাবে প্রস্তুতি নিলে আশা করি ভালো ফল পাবেন। মনে রাখতে হবে, কম পড়বেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন। আরেকটি কথা মনে রাখবেন, একটি ভালো বই আর ভালো একটি দৃঢ় সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে আপনার জীবন। ভুলে গেলে চলবে না- এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি এক ঘণ্টা বেশি পড়া মানে এক ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সকল সৎ ও পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।
চাকরি বাজার ডেস্ক