ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

পেন্টাগনের ভিডিওতে ’বাঙ্কার ব্লাস্টার’ ক্ষমতা, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ খুলল

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২৮ জুন ২০২৫

পেন্টাগনের ভিডিওতে ’বাঙ্কার ব্লাস্টার’ ক্ষমতা, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ খুলল

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়েছে বাংকার ব্লাস্টার বোমা। পেন্টাগন এক ভিডিও প্রকাশ করে বোমার কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ‘জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ নামের বোমাটি ৩০০ পাউন্ড ওজনের এবং এটি ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুতে প্রবেশ করে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটায়।

 

 

ভিডিওতে দেখা যায়, এমওপি (ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর) বোমাটি নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত করে প্রচণ্ড ধুলোর ঝড় তোলে এবং এরপর টানেলের মধ্যে বিস্ফোরণের ফলে আগুনের কুন্ডলী সৃষ্টি হয়। এই বোমা ব্যবহারে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বিমানের পাইলটরা একে "রাতকে দিনে পরিণত করা"র মতো উজ্জ্বল বলে বর্ণনা করেছেন।

পেন্টাগনের সংবাদ ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড্যান কেইন জানান, এই বোমা সাধারণ কোনো বোমা নয়। এটি মাটির অনেক গভীরে ঢুকে তারপর বিস্ফোরিত হয়, ফলে মাটির উপর কোনো গর্ত বা ক্ষতচিহ্ন থাকে না। তিনি আরও জানান, ফোরদো ইউরেনিয়াম প্লান্টের প্রতিটি ভেন্টে ছয়টি করে এমওপি পাঠানো হয়েছিল এবং প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হেনেছে।

 

 

এই অভিযানের ফলে প্রধান ক্ষতি হয়েছে বিস্ফোরণ ও অতিরিক্ত চাপে। এতে টানেল ভেদ করে ভেতরের যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এই সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তবে এর আগে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, এই হামলা পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যাহত করতে পারেনি।

হামলার পর ইরান জানায়, হামলার আগেই তারা তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো থেকে ইউরেনিয়ামের মজুদ সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে—৬০ শতাংশ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বর্তমানে কোথায় রাখা হয়েছে?

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, এত মূল্যবান একটি সম্পদ এক জায়গায় রেখে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। সংস্থার মতে, ইউরেনিয়ামের বড় অংশ ছিল ইসফাহানে। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “আমরা নিশ্চিত না, তবে প্রমাণ বলছে অনেকটাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।” ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী হামলার আগেই ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে। তবে সেগুলো কোথায় নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরানের এই পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুনরায় সচল করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। বিশেষ করে ফোরদোর সেন্ট্রিফিউজগুলো আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, ফলে ইউরেনিয়াম আরও বিশুদ্ধ করার কাজ ব্যাহত হবে।

 

 

পুরো পরিস্থিতি এখন বিশ্ববাসী গভীর দুশ্চিন্তার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইরান কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরবর্তী কূটনৈতিক উত্তেজনা কোন দিকে গড়াবে, তার দিকেই এখন সবার নজর।

ছামিয়া

×