ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

আল জাজিরার প্রতিবেদন

নিজ দেশের মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে ভারত!

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৩৪, ২৬ জুন ২০২৫

নিজ দেশের মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে ভারত!

ছ‌বি: সংগৃহীত

আল জাজিরার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের আসাম রাজ্যে শত শত মুসলিম নাগরিককে জোর করে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

৬৭ বছরের সাইকেল মেকানিক আলি, যিনি আসামের মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা, তাকে ২৩ মে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে গৌলপাড়ার মাতিয়া ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। ২৭ মে ভোরে বিএসএফ তাকে ও আরও ১৩ জনকে নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়। তাদের বলা হয়, সীমান্ত পার হয়ে চলে যেতে।

কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা জানায়, এরা ভারতীয় নাগরিক, বাংলাদেশি নয়। ফলে এই মানুষগুলো সীমান্তের মাঝখানে জল-কাদায় ১২ ঘণ্টা ধরে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে বসে থাকে। কেউ ফিরে যেতে চাইলে বিএসএফ রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের বাধা দেয়।

রহিমা বেগম নামে এক নারী বলেন, “আমি বাংলাদেশে ঢুকতে গেলে বিজিবি আমাকে মেরেছে, আর ভারতের সেনারা বলেছে— ফিরলে গুলি করবে।”

অনেকের অভিযোগ, যাদের পাঠানো হয়েছে তাদের নাম এনআরসিতে ছিল। ট্রাকচালক নিজাম আহমেদের নাম সরকারি তালিকায় ছিল, এমনকি তার বাবা আসাম পুলিশের সদস্য ছিলেন। তারপরও তাকেও সীমান্তে ফেলে দেওয়া হয়। তার ছেলে জানায়, “আমরা ভারতীয়। আমার দাদু ছিলেন পুলিশে, তারপরও বাবাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।”

এমন ঘটনা শুধু আসামে নয়, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রেও ঘটছে। সেখানে মুসলিমদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পরে দেখা যায়, তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, তাদের কাউকে জানানো না করেই এসব করা হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনেক মুসলিম যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই, তাদের শুধু ভাষা ও ধর্মের পরিচয়ে সন্দেহ করে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ। অনেক পরিবার আদালতে মামলা করেছে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, ভারত সরকারের ১৯৫০ সালের যে আইন দেখিয়ে এসব করা হচ্ছে, তা শুধুমাত্র বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য। কিন্তু যাদের প্রজন্ম ধরে ভারতে বসবাস, তাদের এভাবে তাড়ানো বেআইনি।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, এই অভিযান আরও জোরদার হবে। তবে বিরোধী দলগুলো বলছে, এই অভিযান শুধু মুসলিমদের টার্গেট করছে। হিন্দুদের তাড়ানো হচ্ছে না, কারণ তারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার বলে দাবি করা হয়।

একজন মুসলিম নারী বলেন, “এই দেশে জন্ম নিয়েছি, আমার বাবা-মা ও দাদাও এখানে জন্মেছেন। তবু আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।”

বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে বলেছে, এইভাবে লোক পাঠানো ঠিক হচ্ছে না। আল জাজিরা বলছে, সীমান্তে যাদের ফেলে আসা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো নিখোঁজ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো দেশের নাগরিকদের এভাবে জোর করে অন্য দেশে পাঠানো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। “এই দেশ আমার, কিন্তু আমি নই এই দেশের”— এটাই এখন আসামের অনেক মুসলিমের হৃদয়ের কথা।

সূত্র: আল জাজিরা

এম.কে.

×