
থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের বাঘের ভবিষ্যৎ
থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের ঘন, স্যাঁতসেঁতে বনভূমিতে হঠাৎই একদল চঞ্চল সাম্বার হরিণ দৌড়ে বেরিয়ে যায় খাঁচা থেকে। ২০টি হরিণ মুহূর্তেই হারিয়ে যায় পাতার আড়ালে, ঝোপের ভেতরে, যেন মুক্তির আনন্দে বিভোর। তারা টেরও পায় না, এই বনেই ঘাপটি মেরে আছে প্রায় ২০০ বিপন্ন বাঘ, যাদের হিংস্র চোয়ালের সামনে পলকেই হারিয়ে যাওয়া সেই দৌড় একদিন থেমে যাবে।
এই দৃশ্য কেবল একটি হরিণ অবমুক্তকরণ কর্মসূচির অংশ নয়। এটি এক পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প, যেখানে থাইল্যান্ড সরকার ও বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) হাত মিলিয়ে বাঘের জন্য খাদ্যচক্র পুনর্গঠনে কাজ করছে। এই উদ্যোগই বদলে দিয়েছে থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের বাঘের ভবিষ্যৎ।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তৃত বনভূমি, যা ওয়েস্টার্ন ফরেস্ট কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। এতে বন্য বাঘের সংখ্যা গত ১৫ বছরে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। ২০০৭ সালে সেখানে বাঘ ছিল মাত্র ৪০টি। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৯ থেকে ২২৩টির মধ্যে। দেশটির জাতীয় উদ্যান বিভাগ (ডিএনপি) এ তথ্য জানিয়েছে। ডব্লিউডব্লিউএফের টাইগার্স অ্যালাইভ প্রকল্পের প্রধান স্টুয়ার্ট চ্যাপম্যান একে ‘অসাধারণ’ সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন।
কারণ একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশে বাঘের সংখ্যা এভাবে বাড়েনি। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে সাম্বার হরিণ। থাইল্যান্ডে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া এই হরিণ এখন বিপন্ন শ্রেণিতে। প্রকল্পের আওতায় দেশটির জাতীয় উদ্যান বিভাগ ও ডব্লিউডব্লিউএফ এদের প্রজনন বৃদ্ধি করে অবমুক্ত করছে বাঘের প্রাকৃতিক শিকার হিসেবে। এবার প্রকল্পটি পঞ্চম বছরে পা রেখেছে।
ডিএনপির কর্মকর্তা ছাইয়া দানফো বলেছেন, ‘বাঘের খাদ্য হিসেবে বড় আকৃতির তৃণভোজী প্রাণীর অভাব দূর করতে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ।’ ডব্লিউডব্লিউএফ থাইল্যান্ডের গবেষণা ব্যবস্থাপক ওয়ারাপান ফুমানী বলেছেন, একসময় এই এলাকায় হরিণ ছিল খুবই বিরল। সেই কারণে বাঘের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। তবে প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে নিয়মিতই বাঘ দেখা যাচ্ছে এবং তারা সফলভাবে বংশবৃদ্ধিও করছে।