ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি ইরানের আকাশসীমার কাছে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে একের পর এক চীনা কার্গো বিমান। এসব বিমানের ট্রান্সপন্ডার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের গতিবিধি নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করা মানে, বিমানগুলো রাডার থেকে নিজেদের চিহ্ন গোপন করছে, যা স্বাভাবিক কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইটের আচরণ নয়। ফলে জল্পনা বাড়ছে, তবে কি চীন ইরানে গোপনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে?
গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার পরপরই ইরানের আকাশসীমা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। অধিকাংশ যাত্রী ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট আশপাশের দেশগুলোতে ফিরে যায়। ঠিক সেই সময়েই দেখা মেলে এক বিশাল চীনা কার্গো বিমানের, যেটি ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। গোপন উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, পুরো ইরানজুড়ে একমাত্র এই বিমানেরই উপস্থিতি রয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই রহস্যময় বিমানটি ছিল চীনের। শুধু একবারই নয়, গত ছয় দিনে অন্তত তিনটি চীনা কার্গো বিমান ইরানে অবতরণ করেছে। এসব বিমানের উড্ডয়ন সাংহাইসহ চীনের বিভিন্ন শহর থেকে। এগুলো কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে ইরানের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইরান সীমান্তের কাছে এলেই ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়। বিমানগুলোর গন্তব্য দেখানো হচ্ছিল লুক্সেমবার্গ, কিন্তু ইউরোপের আকাশসীমায় তাদের প্রবেশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিমানগুলো যে সামরিক পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, এই ধরণের বিমানে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পরিবহন করা সম্ভব। ফলে জোরালো হচ্ছে সেই আশঙ্কা, চীন হয়তো ইরানে গোপনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।
চীন ও ইরান বর্তমানে কৌশলগত মিত্র। উভয় দেশই পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরোধী জোটের সদস্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল রপ্তানির বড় অংশই যায় চীনে, তাও আবার বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে। এই আয় দিয়ে ইরান পরিচালনা করছে তার সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য ইরান চীন থেকে আমদানি করছে হাজার হাজার যন্ত্রাংশ। পরমাণু ইস্যুতেও বেইজিং রয়েছে তেহরানের পাশে।
ইরানের আকাশে রহস্যজনক এই চীনা কার্গো বিমানের উপস্থিতি নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে ইসরায়েল। দেশটি আশঙ্কা করছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে চীন হয়তো ইরানকে সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ছামিয়া
