
ছবি: সংগৃহীত
ওয়াশিংটনের আকাশে যখন F-35 যুদ্ধবিমানের কানফাটা শব্দে কাঁপুনি ধরেছিল, তখনই লস অ্যাঞ্জেলেসের ফেডারেল প্লাজায় এক তরুণীর চোখে টিয়ার গ্যাসের জ্বালা। শনিবার, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনে আমেরিকা দেখল দুইটি বিপরীত ছবি - একদিকে সংবিধান অ্যাভিনিউয়ে ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক সাজিয়ে সেনাশক্তির জৌলুস প্রদর্শন, অন্যদিকে দেশজুড়ে ২ হাজার স্থানে "No Kings" স্লোগানে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। এই দিনে মিনেসোটায় একজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার রক্তঝরা লাশ আর ইরানের আকাশে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত যেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটকে বৈশ্বিক মাত্রা দিল।
ট্রাম্পের স্বপ্নের সামরিক কুচকাওয়াজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ডলার। রাস্তায় নামানো হয়েছে ২৫টি অত্যাধুনিক এম১ আব্রামস ট্যাঙ্ক, যা সাধারণ আমেরিকানদের জন্য অস্বস্তিকর দৃশ্য। "অন্য দেশগুলো তাদের সামরিক শক্তি দেখায়, আমরাও পারি," বলেছেন ট্রাম্প বুলেটপ্রুফ কাঁচের পিছনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু নিউ ইয়র্কের ব্রায়ান্ট পার্কে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষ তাঁর এই বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছে "ক্লাউনকে ক্রাউন নয়" লেখা প্ল্যাকার্ডে। অভিনেতা মার্ক রাফালোর টুপিতে লেখা ছিল সহজ বার্তা - "আমি একজন অভিবাসী"।
লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিস্থিতি সবচেয়ে উত্তপ্ত ছিল। গত সপ্তাহের অভিবাসন রেইডের প্রতিবাদে জড়ো হওয়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যবহার করেছে ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড। "মেরিনস, লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়ো!" চিৎকার করতে করতে এক তরুণী কাঁদছিল, তার মুখে রক্তাক্ত ক্ষত। অন্যদিকে, আটলান্টায় 'প্রাউড বয়েজ' নামের ডানপন্থি গোষ্ঠীর সদস্যরা কালো-হলুদ পোশাকে ট্রাম্পের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে মর্মান্তিক খবর এসেছে মিনেসোটা থেকে। এক অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করেছেন স্থানীয় একজন ডেমোক্র্যাট নেতাকে। রাজ্যটির গভর্নর এই হামলাকে "রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত" বলে চিহ্নিত করেছেন। এদিকে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে ট্রাম্পের জন্মদিনেই। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাতের খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়েছে ৫%।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সামরিক কুচকাওয়াজ আসলে ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের অংশ। ট্রাম্প চান তাঁর ভোটারদের মনে শক্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা পৌঁছে দিতে। কিন্তু নিউ জার্সির এক স্কুলশিক্ষক মেরি ওয়াল্টার্সের প্রশ্ন, "কোন আমেরিকা আমরা চাই? ট্যাঙ্কের আমেরিকা, নাকি যে আমেরিকা অভিবাসী, সংখ্যালঘু ও অসহায়দের রক্ষা করে?"
শেষ পর্যন্ত, এই দিনটি আমেরিকার ইতিহাসে লেখা থাকবে একটি বিভক্ত জাতির করুণ দলিল হিসেবে। যেখানে একই মুহূর্তে ট্রাম্প সমর্থকরা উল্লাস করছে ট্যাঙ্কের শক্তিতে, সেখানে ক্যালিফোর্নিয়ার এক মায়ের চোখে জল ঝরছে অভিবাসী সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রশ্ন হলো, এই ফাটল কি আরও গভীর হবে? নাকি আমেরিকা আবারও খুঁজে পাবে তার ঐক্যের পথ? উত্তর হয়তো আসছে নভেম্বরের ভোটে।
সাব্বির