
ছবি: সংগৃহীত
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলা বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়ায়, এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে কিনা, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা ও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। যদিও সরাসরি বৈশ্বিক যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত মতামত দেওয়া কঠিন, তবে পরিস্থিতি যথেষ্টই গুরুতর।
কেন এই সংঘাত বিপজ্জনক?
- সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ: দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধের পর এই প্রথম ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি একে অপরের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। এটি সংঘাতকে এক নতুন বিপজ্জনক স্তরে নিয়ে গেছে।
- পারমাণবিক ঝুঁকি: ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে এবং ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও বৈশ্বিক পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা (আইএইএ) তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কথা অস্বীকার করেছে, কিন্তু পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
- অন্যান্য পরাশক্তির জড়িত হওয়ার আশঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিকভাবে জড়িত না থাকার কথা বললেও, ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র। অন্যদিকে, ইরানও যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছে, যদি তারা ইসরায়েলকে রক্ষা করতে হস্তক্ষেপ করে। রাশিয়া এবং চীনের মতো অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিগুলোও এই অঞ্চলে তাদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয়। কিছু রুশ সামরিক বিশ্লেষক ইতোমধ্যে এই সংঘাতকে 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে' বলেও মন্তব্য করেছেন।
- আঞ্চলিক বিস্তৃতি: এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও গোষ্ঠীগুলোকেও জড়িত করতে পারে, যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী এবং সিরিয়ার সরকার। এতে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
- অর্থনৈতিক প্রভাব: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বৈশ্বিক তেলের বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে। হরমুজ প্রণালী, যা দিয়ে বিশ্বের বিশাল অংশের তেল পরিবহন হয়, সেটি বন্ধ হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা ইতিমধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যদিও বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি এখনই তৈরি হয়নি, তবে সংঘাতের মাত্রা ও ভাষা উদ্বেগজনক। তারা বলছেন, ইসরায়েলের আক্রমণ ইরানের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংসের পাশাপাশি সেখানে 'শাসন পরিবর্তন'-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে আরও গভীরভাবে জড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। অন্যদিকে, ইরান তার জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর হামলার পর জনগণের চাপের মুখে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান: জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইরান ও ইসরায়েল উভয়কেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকেও দুই পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। নেতারা এ বিষয়ে ফোনালাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
সংক্ষেপে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এটি এখনই একটি বিশ্বযুদ্ধে পরিণত না হলেও, পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। সূত্রঃ নিউইয়র্ক টিমেসের ওপিনিয়ন থেকে
সাব্বির