ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চূড়ান্ত উত্তেজনার মুখে মধ্যপ্রাচ্য, ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫২, ১৩ জুন ২০২৫

চূড়ান্ত উত্তেজনার মুখে মধ্যপ্রাচ্য, ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। ইরানের রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একযোগে বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার ভোরে প্রকাশিত ওই বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “ইরানের পরমাণু অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলোকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের ধ্বংসের হুমকি প্রতিহত করার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।”

রাতভর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তেহরান, সর্বোচ্চ সতর্কতায় ইরান
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার ভোররাতে ডজনখানেক পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘নূর নিউজ’ জানায়, রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় একাধিক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

‘নেশন অব লায়ন্স’ নামে অপারেশন শুরু করল ইসরায়েল

ইসরায়েলি জাতীয় দৈনিক The Times of Israel–কে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে টার্গেট করে একযোগে বিমান অভিযান শুরু হয়েছে, যার কোডনেম ‘Nation of Lions’।”একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “ইরান যে তাৎক্ষণিক হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা মোকাবেলায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম Press TV একাধিক হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে, তবে নিহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি।ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেন, হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানি পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে এই হামলাকে “প্রতিরোধমূলক আঘাত” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং জানান, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কা রয়েছে এবং এর জন্য দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৩টা থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দেশের সিভিল ও পাবলিক সিকিউরিটি নির্দেশনায় পরিবর্তন এনেছে। এক্স–এ দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাবেশ এবং অধিকাংশ কর্মস্থলের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া।”ইসরায়েলের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরানে ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।তিনি বলেন, “আজ রাতে ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এই অভিযানে কোনোভাবে জড়িত নই এবং আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”রুবিও আরও বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে জানাচ্ছি ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ বা কর্মীকে লক্ষ্যবস্তু না করে।”

পরমাণু আলোচনা অনিশ্চয়তায়, ট্রাম্প ছিলেন অবহিত

আল জাজিরার ওয়াশিংটন প্রতিনিধি অ্যালান ফিশার বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে বোঝা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিলেন।ফিশার বলেন, “মাত্র একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, তারা বাগদাদের দূতাবাস থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে এবং অন্যান্য দূতাবাসেও কর্মীদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ট্রাম্প চান না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক, তবে তিনি এখনো আশাবাদী যে আলোচনার মাধ্যমেই সংঘাত এড়ানো সম্ভব।”

ফিশার আরও বলেন, “সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখে যুক্তরাষ্ট্র কী অবস্থান নেয়। যদি তারা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে বোঝা যাবে পরমাণু আলোচনার পথ চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।”

ইরানের হুঁশিয়ারি: হামলা হলে টার্গেট হবে মার্কিন ঘাঁটি

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “যদি পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলো সরাসরি আঘাতের আওতায় আসবে।”তিনি বলেন, “ওপারের কিছু কর্মকর্তা বলছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ হবে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি সংঘাত চাপিয়ে দিলে, আমরা সাহসিকতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো টার্গেট করব, তারা যেই দেশেই থাকুক না কেন।”

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান এপ্রিল মাস থেকে পাঁচ দফা পরমাণু আলোচনা সম্পন্ন করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান, আলোচনার মাধ্যমে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখা হোক।


ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার এই সর্বশেষ ধাপ মধ্যপ্রাচ্যকে এক অনিবার্য সংঘাতের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আপাতত সরাসরি জড়িত না থাকলেও পারমাণবিক আলোচনা ও কূটনৈতিক সমঝোতার ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। 

 


সূত্র:আল-জাজিরা

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×