
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মূল পরিকল্পনাকারী লিওনার্ড লিওকে সম্প্রতি “ধূর্ত ব্যক্তি” এবং “সম্ভবত আমেরিকাকে ঘৃণা করে” বলে আক্রমণ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে দেওয়া এই বিস্ফোরক মন্তব্যে হতবাক হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও আইনি মহলের অনেকেই।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর লিও ট্রাম্পকে সুপ্রিম কোর্টের জন্য ২১ জন বিচারপতির একটি তালিকা দেন, যারা সবাই ফেডারেলিস্ট সোসাইটির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া ২৩৪ জন বিচারকের নির্বাচন প্রক্রিয়াও অনেকাংশে এই সোসাইটির হাতেই ছিল, জানিয়েছিলেন হোয়াইট হাউসের তৎকালীন আইন উপদেষ্টা ডন ম্যাকগাহান।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতিই নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা—যারা তার অনুগ্রহ চায়, তাদের সবাইকেই এখন তার প্রতি আনুগত্য দেখাতে হবে। ফেডারেলিস্ট সোসাইটিও সেই একই পরীক্ষার সম্মুখীন।
১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ফেডারেলিস্ট সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান দলীয় বিচারপতি নির্বাচনে পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যদিও তারা ‘মূলতত্ববাদ’ ও ‘পাঠমূল্য বিশ্লেষণ’-এর মতাদর্শ প্রচার করে, বাস্তবে তাদের নির্বাচিত বিচারপতিরা রিপাবলিকানদের নীতির সঙ্গে মিলে যায়—বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে।
২০১৬ সালে এই সোসাইটির অনুমোদন ট্রাম্পকে বড় রাজনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছিল। সেবার ৭৭ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন।
ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিচারপতির নেতৃত্বে বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট রিপাবলিকান এজেন্ডার বড় বড় বিষয়ে—যেমন অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন, গর্ভপাত অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা—গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। একই সঙ্গে “মেজর কোয়েশ্চেনস ডকট্রিন” ও “শেভরন ডিফারেন্স” বাতিল করে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি Trump v. U.S. মামলায় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে।
এখন আর ট্রাম্প কোনো নীতির বা কোনো দলের অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল নন। রিপাবলিকান অভিজাতদের ওপর প্রভাব হারিয়ে ট্রাম্প এখন দলটির প্রধান নিয়ন্ত্রক শক্তি। এমনকি সিনেটর মিচ ম্যাককনেল একাধিকবার ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার মনোনয়নের বিরোধিতা করলেও তার কোনো বাস্তব প্রভাব পড়েনি।
বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক এখন স্নায়ুযুদ্ধের পর্যায়ে। প্রথম মেয়াদে ডিএসিএ (ড্রিমারস নীতি) ও নাগরিকত্ব প্রশ্নে করা আদমশুমারির মতো বিষয়ে আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। অথচ সেই সময়ে ফেডারেল আদালতের এক চতুর্থাংশই ছিল ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত।
আজকের দিনে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে বিচার বিভাগ আর বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, বরং একটি চ্যালেঞ্জ। বিচারপতি নিয়োগ তার কাছে আর আদর্শিক নয়—এটি এখন তার রাজনৈতিক লড়াইয়ের হাতিয়ার মাত্র। আর সেই বাস্তবতায় ফেডারেলিস্ট সোসাইটিও যদি আনুগত্য না দেখায়, তাহলে তারা ট্রাম্পের দৃষ্টিতে পরিত্যাজ্য হয়ে উঠতে পারে।
ফারুক