ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারত-পাকিস্তান সংকট বোঝার জন্য যে পাঁচটি মূল বিষয় জানা উচিত

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২০ মে ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সংকট বোঝার জন্য যে পাঁচটি মূল বিষয় জানা উচিত

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। তবে পরিস্থিতির গভীর বিশ্লেষণের জন্য শুধু খবর নয়, প্রয়োজন কৌশল ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টিমসনের "স্ট্র্যাটেজিক লার্নিং ইনিশিয়েটিভ" এমন পাঁচটি ধারণা চিহ্নিত করেছে, যা দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংকট ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। ধারণাগুলো হলো: প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্থিতিশীলতা-অস্থিতিশীলতা প্যারাডক্স, উত্তেজনার বৃদ্ধি, দূরপাল্লার অস্ত্র, এবং সংকট ব্যবস্থাপনা, সংকটের পটভূমি।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্দেহভাজন ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এর পরপরই পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পাকিস্তান একপর্যায়ে ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। যদিও পরবর্তীতে দুই দেশই সামরিক অভিযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, তবুও এটি দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উদ্বেগজনক একটি অধ্যায় হয়ে উঠেছে।

১. প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসে সামরিক অভিযান "প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধমূলক" ছিল। প্রতিরোধ অর্থ এমন হুমকি বা সামর্থ্য দেখানো, যাতে শত্রু আক্রমণ করার চিন্তা থেকেও বিরত থাকে।

এই সংকটে প্রতিরোধের ব্যর্থতা স্পষ্ট- কারণ, যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ভারত চেয়েছে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে ভবিষ্যতের হামলা রোধ করতে, আর পাকিস্তান চেষ্টা করেছে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়ে ভারতের ঐ অভিযান থামাতে। কিন্তু উত্তেজনা সত্ত্বেও প্রতিরোধ পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, বরং উভয় পক্ষই পরবর্তী সময়ে আবার "প্রতিরোধ পুনঃস্থাপন" করতে চেয়েছে।

২. স্থিতিশীলতা-অস্থিতিশীলতা প্যারাডক্স: পারমাণবিক অস্ত্র দুই রাষ্ট্রকে কৌশলগত পর্যায়ে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখে- এটি পরমাণু বিপ্লব তত্ত্ব। তবে এই প্যারাডক্স বলছে, যেহেতু উভয় পক্ষ জানে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি তারা নিতে চাইবে না, তাই সীমিত পর্যায়ে সংঘাতের সম্ভাবনা বরং বেড়ে যায়। ভারত বিগত বছরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে সীমিত সামরিক অভিযান চালিয়েছে- যেমন ২০১৬ সালে সার্জিকাল স্ট্রাইক ও ২০১৯ সালে বালাকোটে বিমান হামলা। এবারের সংকটেও দেখা গেছে, ভারত আগের চেয়ে বড় পরিসরে অভিযান চালাতে প্রস্তুত।

৩. উত্তেজনার বৃদ্ধি: সংকটের একটি ভয়াবহ দিক ছিল ধারাবাহিক প্রতিশোধমূলক হামলা, যার মধ্যে শহর ও সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এমনকি ভারত পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে নূর খান বিমানঘাঁটির ওপর হামলা চালায়, যা পারমাণবিক কমান্ড কাঠামোর কাছে হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

উত্তেজনার নিয়ন্ত্রণ সবসময় নেতাদের হাতে থাকে না। ভুল বোঝাবুঝি, অনুমোদনহীন অভিযান বা ভুল টার্গেটিং যেকোনো সময় সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৪. দূরপাল্লার অস্ত্র: এই সংকটে দুই দেশই স্ট্যান্ডঅফ অস্ত্র- যেমন ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল- ব্যবহার করেছে। ভারত ফরাসি স্ক্যাল্প, ভারত-রাশিয়ার ব্রহ্মোস ও ইসরায়েলি হারোপ ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে ধারণা করা হয়। পাকিস্তান চীনা পিএল-১৫ ও তুর্কি ইহা ড্রোন ব্যবহার করেছে।

এইসব অস্ত্র শত্রু সীমান্তে না ঢুকে আঘাত হানতে পারে, তবে ঝুঁকিও বেশি- কারণ, কোনো মিসাইল পারমাণবিক অস্ত্র বহন করছে কিনা তা জানার সময় থাকে না। ফলে ভুল ব্যাখ্যা ও হঠাৎ পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কা থেকেই যায়।

৫. সংকট ব্যবস্থাপনা: শেষ পর্যন্ত উভয় দেশ সামরিক অভিযান বন্ধে সম্মত হয়। এ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক হটলাইন ব্যবহার এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তান সেনাপ্রধানের সঙ্গে ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সৌদি আরব ও ইরানও সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করেছে।

তবে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতে একপক্ষকে আরো দুঃসাহসী করে তুলতে পারে, যদি তারা ভাবেন বিদেশিরাই পরিস্থিতি সামাল দেবে।

একাডেমিক তত্ত্ব সবসময় বাস্তবতা ব্যাখ্যা করতে পারে না, তবে বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো দেয়। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংকট ভবিষ্যতের জন্য নানা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুধু গবেষকদের কাজ নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি।

সূত্র: https://rb.gy/c69wzu

মিরাজ খান

×