ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

বিজেপি’র ’অখন্ড ভারত’ দুঃস্বপ্ন, একঘরে ভারত এবার টুকরো হবার পথে!

মেহেদী কাউসার

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৩:৩২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজেপি’র ’অখন্ড ভারত’ দুঃস্বপ্ন, একঘরে ভারত এবার টুকরো হবার পথে!

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বহুদিন ধরে ‘অখণ্ড ভারত’ -এর ধারণা প্রচার করে আসছে, যা তাদের আদর্শিক ভিত্তির মূল বিষয়। আরএসএসের দ্বিতীয় প্রধান এম এস গোলওয়ালকরসহ অন্য নেতারা বহু লেখায় ‘অখণ্ড ভারত’-এর স্বপ্ন তুলে ধরেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বিজেপিও এই ধারণাকে সামনে রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকালে ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্রসহ একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। এই মানচিত্রে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানকে একত্রে দেখানো হয়।

ম্যুরালটি প্রকাশের পর প্রতিবেশী দেশগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। পাকিস্তান ও নেপালের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রথমে নীরব থাকলেও অভ্যন্তরীণ চাপে পরে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন দাবি করে, এটি সম্রাট অশোকের রাজত্বকালীন মানচিত্র, তবে বিজেপির নেতাদের টুইট ও বক্তব্যে স্পষ্ট, এটি তাদের ‘অখণ্ড ভারত’-এর পরিকল্পনারই প্রতিফলন। বিজেপি'র মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী টুইটারে মানচিত্রটি প্রকাশ করে বলেন, ‘সংকল্প স্পষ্ট—অখণ্ড ভারত।’

অখণ্ড ভারতের ধারণা বাস্তবায়নের স্বপ্ন বিজেপি প্রচার করলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি এখন ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। মণিপুর রাজ্যে কুকি ও মেইতিদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে গত বছরের মে মাস থেকে ২৬০ জন নিহত এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসা বিদ্রোহীরা অস্ত্রসহ সংঘর্ষে যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তাল মণিপুরে প্রায় ৬৭ হাজার সেনা মোতায়েন করেও মোদি সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। একই সঙ্গে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল দোহমা সম্প্রতি ভারত ভাঙার দাবি জানিয়ে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছেন।

উত্তর-পূর্ব ভারতে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের গুঞ্জন এখন জোরালো। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে আসা বিদ্রোহীদের সঙ্গে রকেট লঞ্চার, স্নাইপার রাইফেলসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্রের উৎস এবং মণিপুরের অস্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে এই অস্থিরতা মোদি সরকারের জন্য বড় সংকট তৈরি করছে।

ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতাও এই সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে। মোদির শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সব বন্ধু হারিয়ে একঘরে হয়ে পড়েছে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।

২০২৩ সালের জুনে বারাক ওবামা বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হলে ভারত ভবিষ্যতে খণ্ড খণ্ড হয়ে যেতে পারে। তিনি তখন জো বাইডেনকে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অখণ্ড ভারত গঠনের স্বপ্ন নিয়ে বিজেপি যতই উচ্চবাচ্য করুক, ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটি বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেমন সচেতন, তেমনি ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকটও এই পরিকল্পনার পথে বড় বাধা। ভারতের পূর্বাঞ্চলের মণিপুর, মিজোরাম এবং দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দেশটির অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর আঘাত হানছে।

এ পরিস্থিতিতে ২০৪৭ সালের মধ্যে অখণ্ড ভারত গঠনের বিজেপি-আরএসএসের স্বপ্ন বাস্তবায়নের বদলে তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।

এম.কে.

×