
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি টার্গেট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই ঘোষণাকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক মোড় হিসেবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেন, আয়াতুল্লাহ খামেনির হত্যার বিষয়টি "নিষিদ্ধ নয়"। অর্থাৎ ইসরায়েল এখন শুধু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকেই নয়, বরং দেশটির নেতৃত্ব কাঠামোকেও বিচ্ছিন্ন করতে প্রস্তুত।
এই বক্তব্য ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থানে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এখন পর্যন্ত মূলত পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরেই ইসরায়েলি অভিযান চলছিল, তবে এবার টার্গেট হতে পারেন সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলাগুলো ইতোমধ্যে ইরানের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছে। নাতাঞ্জের মতো অত্যাধুনিক ও সুরক্ষিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাতেও কাঠামোগত ধসের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে তারা নয়জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বেশ কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
বর্তমানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল আরও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ চালু হয়েছে। শনিবার সেই অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল অভিমুখে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো প্রতিহত করতে সক্রিয় রয়েছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তেল আবিবসহ বড় শহরগুলোয় সাইরেন বেজে ওঠে, চালু করা হয় জরুরি প্রোটোকল।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই তেহরানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান রাতভর বোমা হামলা চালিয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় পরিস্থিতি ক্রমশই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, “তারা যে ভয়াবহ অন্যায় করেছে, তার পরিণতি থেকে কেউ রেহাই পাবে না। আমাদের জবাব কঠোর হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত এখন আর শুধু সামরিক পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই। যখন কোনো দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং যখন পরমাণু স্থাপনাগুলো সরাসরি হামলার শিকার হয়, তখন তা শুধু দুই দেশের লড়াই নয় পুরো অঞ্চলকে একটি অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়।
বিশ্ব সম্প্রদায় এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, উভয় পক্ষই এখন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরার ইঙ্গিত দেয়নি। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ইতোমধ্যেই ইরানের পরমাণু সক্ষমতায় বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। তবে সংঘাত যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এই আগুনের শেষ কোথায়?
সূত্র:https://tinyurl.com/2j437nwy
আফরোজা