
মানবদেহে সাধারণত ২৩ জোড়া অর্থাৎ মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু কখনও কখনও শিশুর জন্মের সময় ২১তম ক্রোমোজোমে অতিরিক্ত একটি কপি যুক্ত হয়ে যায়, ফলে ৪৭টি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায় শিশু। এই অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতির কারণেই ডাউন সিন্ড্রোম বা ট্রাইসোমি-২১ নামক জটিলতা দেখা দেয়।
ডাউন সিন্ড্রোমের ট্রিপ্লিকেশন বৈশিষ্ট্য বোঝাতে ২১ মার্চকে বিশ্ব ডাউন সিন্ড্রোম দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিন্ড্রোম নিয়ে জন্ম নেয় এবং বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষেরও বেশি ডাউন সিন্ড্রোম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে। বাংলাদেশেও চিত্র ভয়াবহ—প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫টি শিশু এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নিচ্ছে।
ডাউন সিন্ড্রোম শিশুদের মুখ কিছুটা চ্যাপ্টা, নাক বসা, চোখের উপরের অংশে ভাঁজযুক্ত, কান ছোট, জিভ একটু বড় এবং মুখের বাইরে চলে আসে। এদের হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা থাকে এবং পায়ের আঙুলের মাঝেও বড় ফাঁক দেখা যায়। এছাড়াও থাকে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র, লাংস বা শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা, খাদ্যনালীর গঠনগত সমস্যা, থাইরয়েডের জটিলতা ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই সবকিছুই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে।
ডাউন সিন্ড্রোম শিশুরা সাধারণত কথা বলতে ও হাঁটতে দেরি করে এবং বুদ্ধিমত্তা অপেক্ষাকৃত কম হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের বয়স বেশি হলে, আগের কোনো সন্তান যদি ডাউন সিন্ড্রোম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়ে থাকে অথবা মায়ের ক্রোমোজোমে ট্রান্সলোকেশনের সমস্যা থাকলে এমন সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তবে নিরুৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো ডায়াগনোসিস ও হার্ট, থাইরয়েডের চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এসব শিশুদেরও স্বাভাবিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। তারা সাধারণত খুবই মিশুক স্বভাবের হয় এবং গান শোনা, ছবি আঁকা, নাচ ও টেলিভিশন দেখা উপভোগ করে। এই ধরণের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত রাখলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বিশেষায়িত শিক্ষা, পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডাউন সিন্ড্রোম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরাও দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারে। পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি আর যত্ন তাদেরকে একসময় দেশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম করে তুলতে পারে।
মিমিয়া