ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বাবা এক নীরব যোদ্ধা 

সোহেল রানা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা সদর

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৫ জুন ২০২৫

বাবা এক নীরব যোদ্ধা 

সংগ্রাম আর অমানবিক পরিশ্রমে সন্তানদের বড় করেন  বাবা নামের বটবৃক্ষ। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সন্তানদের লেখা পড়া করানোসহ মৌলিক চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নামই বাবা।

সংসার চালিয়ে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার প্রত্যয়ে রিকশা চালিয়ে কিছু সঞ্চয় করেছিলেন পাবনা সদর উপজেলার নজরুল ইসলাম (৫০)। কিন্তু তার সঞ্চয়ের টাকা খেয়ে গেছে শকুনের দল।

রিকশা চালিয়ে ভালোই চলছিলেন তিনি, কিন্তু বিদেশ (ইরাক) যাওয়ার জন্য টাকা জমা দেয়। অনেকদিন বিদেশ যাওয়ার ছলে চলে যায় দিন৷ কয়েক মাস পর তাকে ইরাক যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে ইরাকের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। কুয়েত যাত্রাবিরতী দিলে আর যাওয়া হয় নাই স্বপ্নের ইরাকে। দালালদের খপ্পরে পড়েন তিনি। বাংলাদেশের দালালদের সিন্ডিকেটে কুয়েতে একটি আাবাসিক হোটেলে থাকতে দেওয়া হয়। খেয়ে না খেয়ে দিন যায় নজরুল ইসলামসহ তার সঙ্গে থাকা ৫০ জনের। 

কিছু দিন সেখানে থাকার পর কুয়েত পুলিশ অবৈধ কাগজপত্রের জন্য আটক করে। দীর্ঘ ছয় মাস জেল খেটে দেশে ফেরেন তিনি৷ তার ছেলে সন্তানরা ও স্ত্রী দেশে অনেকটা না খেয়ে কোন রকমভাবে জীবন অতিবাহিত করে। 

দেশে আসলে আবারও রিকশা চালিয়ে জীবন সংগ্রাম আর দেনা পরিশোধের যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। নিজের জায়গা জমি বিক্রি করেও দেনা পরিশোধ করতে পারেন নাই। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দুই ছেলে সন্তান ও পরিবারের মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে কোনরকম জীবন যুদ্ধে টিকে থেকে পরিশোধ করেছেন বিদেশে যাওয়ার সময় ধার করা টাকা।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত পানি করে উপার্জন করেছেন তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। সমাজের অবহেলিত একজন মানুষ থেকে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী ও দায়িত্ববান সমাজের মানুষ। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অত্র এলাকার প্রামানিক ও একাধিক তার সমাজের মানুষ বলেন, নজরুল তার জীবন যুদ্ধে টিকে থেকে তার ছেলেদের উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। তার পরিবারের সে বিদেশে জেলে থাকা অবস্থায় বেশির ভাগ দিন না খেেয় কাটিয়েছে। নজরুল আমাদের সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় তার মাধ্যমে আমাদের সমাজের মানুষ বুঝতে পেরেছে। 

অত্র এলকার স্থানীয় সামাজিক সংগঠন নদিপ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, তার সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক বলা যাবে। হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তিনি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন বাবা। তার সাংসারিক জীবনে যে কালো অধ্যায় নেমে এসেছিলো সে তার পরিশ্রমের মাধ্যমে আলোকিত করেছে। আজ ১৫ জুন বাবা দিবসে নজরুলের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা সেই  সাথে  সকল বাবার প্রতি রইলো দোয়া আর ভালোবাসা।

রাজু

×