ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিলন কান্তি দে

শিল্পকলায় যাত্রা উৎসব

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

শিল্পকলায় যাত্রা উৎসব

আবার বাঁশি বাজবে। কনসার্ট শুরু হবে। আলো ঝলমল হয়ে উঠবে চার খুঁটির আসর। চার খুঁটি মানেই যাত্রামঞ্চ। প্রতি বছরেই একবার করে এ ধরনের আসর বসায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। প্রতিবারই দেখা যায় সবার জন্য উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। তাদের মনোজগতে তখন কল্পকাহিনীর নায়ক-নায়িকা, রাজা-বাদশার লড়াই, খলনায়কের অট্টহাসি আর লোককাহিনীর গুনাই, আলোমতি, সখিনা, কমলা, কাজলরেখা- এ সব জনম দুঃখিনী কন্যাদের সে কী বিলাপ, ক্রন্দন! সবমবেত দর্শককে মোহাবিষ্ট করে টেনে নিয়ে যায় রূপবানের সেই আবেগ বিহ্বল গান-বাড়ির-ওনা দক্ষিণ পাশে গো/ ও দাই মা কিসের বাইদ্য বাজে গো আমার দাইমা ... ততক্ষণে সুরে সুরে ছন্দে ছন্দে তরঙ্গে বিভঙ্গে একটি মাত্র শব্দই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়- ‘যাত্রা-যাত্রা-যাত্রা!’ ঢাকার দর্শকের জন্য সুখবর, এই শীতের হিমেল হাওয়ায় সেই যাত্রাই আবার দেখতে পাচ্ছেন আগামীকাল শুক্রবার থেকে। তবে এই যাত্র পরীক্ষামূলক, অর্থাৎ যাত্রাদল নিবন্ধনের জন্য এ আয়োজন। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা করে ৫-৬টি করে যাত্রাপালার মঞ্চায়ন হবে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচিত্র বিভাগ আয়োজিত চার দিনব্যাপী দল নিবন্ধনের জন্য যাত্রা উৎসব উদ্বোধন করবেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রসঙ্গত, দেশীয় যাত্রাশিল্পকে উৎসাহ প্রদান এবং সামগ্রিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালে ৩০ আগস্ট একটি জাতীয় যাত্রা-নীতিমালা প্রণয়ন ও তা গেজেট ভুক্ত হয়। এই নীতিমালার আলোকে শিল্পকলা একাডেমির ডিজিকে চেয়ারম্যান ও নাট্যকলার বিভাগের পরিচালককে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যের একটি ‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এই কমিটির তত্বাবধানে যাত্রানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যাত্রাদল-নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত ১১তম যাত্রা প্রদর্শনী হয় এবং এ পর্যন্ত নিবন্ধিত যাত্রাদলের সংখ্যা ১১৭ করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর এই ধারাবাহিকতা স্থগিত থাকে। অনুষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী পরিচালক পূর্ণালেক্ষ্য চাকমা। তিনি বলেন, এবার আমরা এই আয়োজনের নাম দিয়েছি যাত্রা উৎসব। সব কিছু ঠিক থাকলে এবং দল মালিকরা আন্তরিক হলে এবারের উৎসব সুন্দর ও সফল হবে বলে আশা করি। জানা গেছে, নিবন্ধনের জন্য এবার ২১টি যাত্রাদল উৎসবে অংশগ্রহণ করছে। এবারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেশ কিছু ধর্মীয় বা পৌরাণিক পালার পরিবেশনা, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। শ্রেণী বিচারে অন্য পালাগুলো হচ্ছে-গীতিনাট্য ৬টি, সামাজিক ৬টি, ঐতিহাসিক ১টি। কোন কোন পালা আবার একাধিক দলেও মঞ্চায়ন হচ্ছে। এবারের যাত্রা উৎসবে অংশগ্রহণকারী দল ও পালার তালিকা- ২৯ জানুয়ারি : এ দিন ৫টি দল বেহুলাকেন্দ্রিক ৫টি পালা মঞ্চায়ন করবে। দলগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহের দি নিউ আলেয়া অপেরা, ঈশিতা অপেরা, দি নিউ রূপা অপেরা, টাঙ্গাইলের বেহুলা লক্ষিন্দর অপেরা এবং ভাসান যাত্রা অপেরা। ৩০ জানুয়ারি : পিরোজপুরের মহাশক্তি নাট্য সংস্থার অনুসন্ধান, মাতা মঞ্জুলী কাদেরী দেবী নাট্য সংস্থার সীতার বনবাস, বরিশালের আনন্দময়ী নাট্য সংঘের পতিতপাবন গুরুজী, শিবশক্তি নাট্য সংস্থার মহারাজা হরিশ্চন্দ্র, দক্ষিণ বঙ্গ নাট্য সংস্থার বিমাতার চক্রান্ত, খুলনার শ্রীগুরু নাট্য সম্প্রদায়ের ঢাকা জলছে। ৩১ জানুয়ারি : বগুড়ার করতোয়া যাত্রা ইউনিটের জেল থেকে বলছি, ঠাকুরগাঁওয়ের দেশ বাংলা অপেরার কাশেম মালা, বরগুনার পায়রা যাত্রা ইউনিটের গুনাই বিবি, পঞ্চগড়ের দি লায়ন অপেরার দেবী সুলতানা, টাঙ্গাইলের মৌ অপেরার লাইলী-মজনু। ১ ফেব্রুয়ারি : বগুড়ার সোনালি নাট্য সংস্থার মিলন মালা, টাঙ্গাইলের মধুমতি অপেরার লাইলী-মজনু, খুলনার বনানী অপেরার নিহত গোলাপ, নরসিংদীর শিবপুর যাত্রা ইউনিটের আলোমতি-প্রেমকুমার এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার পাপি অপেরার আপন দুলাল।
×