
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে জমানো টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন—এই প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দে ভোগেন। ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার খবর, শেয়ারবাজারের অস্থিরতা, এবং বেসরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগের ঝুঁকি—সব মিলিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে নাজেহাল অনেক সাধারণ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে সামনে এসেছে সঞ্চয়পত্র।
কী এই সঞ্চয়পত্র?
সঞ্চয়পত্র হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি বিনিয়োগ প্রকল্প। এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ পাওয়া যায় এবং মেয়াদ শেষে মূলধন ফেরত পাওয়া যায়। এটি সরাসরি সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম।
বর্তমানে দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে:
- পেনশনার সঞ্চয়পত্র
- পরিবার সঞ্চয়পত্র
- তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
- পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
বাজেট ঘাটতি ও সঞ্চয়পত্রের ভূমিকা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৫,৪০০ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা আগের বছরের (১৮,০০০ কোটি টাকা) তুলনায় ২,৬০০ কোটি টাকা কম। এটি প্রমাণ করে, সরকারের ঋণ নির্ভরতা কিছুটা কমলেও সঞ্চয়পত্র এখনো রাজস্ব ঘাটতি পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
কারা কিনতে পারেন কোন সঞ্চয়পত্র?
সব সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারেন না। যেমন:
পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: ১৮ বছরের বেশি যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক।
পরিবার সঞ্চয়পত্র: ১৮ বছরের বেশি নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছরের বেশি যেকোনো নারী-পুরুষ।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি/আধা-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পেনশনপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানেরা।
কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন?
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য লাখ লাখ টাকা থাকতে হবে—এমন নয়। ১০,০০০, ২০,০০০ বা ৫০,০০০ টাকারও সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। এগুলো পাওয়া যায়:
- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় বিউরো
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- তফসিলী ব্যাংক ও ডাকঘর
সব সময় সঞ্চয়পত্রই কি সেরা?
সব ক্ষেত্রেই সঞ্চয়পত্র সেরা নয়। জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে যাদের তাৎক্ষণিক অর্থ দরকার হতে পারে, তাদের জন্য ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) সুবিধা বেশি কার্যকর। কারণ, সেখানে জামানত রেখে সহজেই ঋণ নেওয়া যায়—যা সঞ্চয়পত্রে সম্ভব নয়।
সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, দীর্ঘমেয়াদি এবং নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্র একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। তবে ব্যক্তির আর্থিক প্রয়োজন ও ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা বুঝে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
নুসরাত