ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হালদার সিলভার-গোল্ড চিংড়ি: কোটি টাকার আয়ের সম্ভাবনা

ইউনুস মিয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা ,ফটিকছড়ি,চট্টগ্রাম।

প্রকাশিত: ২২:২০, ২ জুন ২০২৫

হালদার সিলভার-গোল্ড চিংড়ি: কোটি টাকার আয়ের সম্ভাবনা

২ জুন- প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননে দেশের একমাত্র নদী চট্টগ্রামের হালদা। হালদায় কার্প বা রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে এবার সর্বোচ্চ সাড়ে ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। কার্পজাতীয় মাছের ডিম আহরণ করতে গিয়ে ‘ সিলভার-গোল্ড’ খ্যাত চিংড়ি মাছের পোনা ধ্বংস হয়ে থাকে । হালদা নিয়ে গবেষণা, পানি দুষণ রোধ, গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ কোনো কিছুরই কমতি নেই। 

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের জন্য শুধু বাংলাদেশে নয়; এশিয়ায় একমাত্র নদী হালদা । এ নদীতে রুই,মৃগেল, কাতলা ও কালি বাউশের প্রজননের পাশাপাশি অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে "গ্রীণ গোল্ড চিংড়ি" উৎপাদনের । এ নদীতে সারা বছর "গ্রীণ গোল্ড চিংড়ি" চোখে পড়ে। বিশেষ করে বর্ষা ও শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির এ চিংড়ির প্রজনন হয়। এলাকার মৎস্য শিকারীরা বর্ষা কাল ব্যতিত বছরের বাকী ৯/১০ মাস চিংড়ি শিকার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে নদীতে পানি প্রবাহ হ্রাস পেলে স্থানীয় মৎস্যজীবিরা বাঁশের তৈরী বিশেষ "চাঁই" এর মাধ্যমে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে থাকে। সন্ধ্যার আগে গোবর-ধানের কুঁড়া দিয়ে মন্ড তৈরী করে চাঁই এর ভিতর পুরিয়ে মুখ আটকিয়ে হাঁটু পরিমাণ নদীর পানিতে ডুবিয়ে বাঁশের কন্থি দিয়ে আটকে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে ঐ চাঁই পানি থেকে তুললে বিপুল পরিমাণ চিংড়ি'র পোনা আহরণ করা হয়। আবার, অনেকেই রাতের আঁধারে মিহি সূতার জাল টেনে চিংড়ি'র পোনা আহরণ করে থাকে। প্রতি কেজি চিংড়ি'র পোনা বিক্রি করা হয় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। মৎস্য ঘেরের মালিকরা এ পোনা সংগ্রহ করে পুকুর-দীঘিতে অবমুক্ত করে থাকে। মৎস্য চাষীরা জানান, প্রতি কেজি চিংড়ি'র পোনা অবমুক্ত করার ঠিক এক বছর পর ৫০-৬০ কেজি বড় চিংড়ি উৎপাদন হয়ে থাকে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪০-৬০ হাজার টাকা। 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই সময় চিংড়ি রপ্তানি হয় ৫ হাজার ৯২৪ টন। যার বাজার মূল্য ছিল ৭০৬ কোটি টাকা।


রফতানি ছাড়াও দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে মৎস্য খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কৃষির অন্যান্য উপ খাত যেমন শস্য, প্রাণিসম্পদ ও বনের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বির্ধারনেও মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রায় ৬০ ভাগ প্রাণিজ আমিষের জোগান দেয় মাছ। যার বিশাল একটা অংশের যোগান দেয় চিংড়ি। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান,হালদা নদীতে জাতীয় মা মাছের আহরিত ডিমের মত বর্ষা মৌসুমে ঐ ডিমের পাশাপাশি চিংড়ি পোনা আহরণ করে যদি সংরক্ষণ করা হয়, অথবা শীত মৌসুমে মিহি সূতার জাল টেনে চিংড়ি পোনা আহরণ করা খুবই সহজ। পরে আহরিত এ পোনা বিক্রি করে পুকুর-দীঘিতে অবমুক্ত কিংবা পোনা বিক্রি করে মোটা অংকের রাজস্ব আয় সম্ভব।এটিও দেশের একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় খাত হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। এ ব্যাপারে,মৎস্য অধিদফতরের, জেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ সহ হালদা নিয়ে যারা গবেষনা করছেন তাঁদেরকেই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

Jahan

×