ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন 

মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১১ জানুয়ারি ২০২৪

মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে

মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে

মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু বিদেশী মুদ্রার মজুত কম থাকার সম্ভাবনা আছে, তাই আমদানি বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিপরীতে, সরকারি বিনিয়োগ স্থিতিশীল থাকবে বলে অনুমান করছে বিশ্বব্যাংক।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যমতে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 
চলতি জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেকটস্্’ বা ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশে নেমে আসতে পারে। সেইসঙ্গে তাদের আনুমানিক হিসাব, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সাত দশমিক ৫০ শতাংশ, আগের অর্থবছরেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। সাময়িক হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়বে। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক আট শতাংশ।
এ ছাড়া দেশের রপ্তানি নিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না এবং বিষয়টি প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু সময় অনিশ্চয়তা ছিল, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে যার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক এক শতাংশ।

তাদের আনুমানিক হিসাব, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছে, আমদানি নিষেধাজ্ঞা, উপকরণ ও জ্বালানির উচ্চমূল্য আর তার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক ও আর্থিক চাপের প্রভাব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। মূলত খাদ্যের উচ্চমূল্য ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মুদ্রানীতির রাশ টেনে ধরা হয়। সেইসঙ্গে লেনদেনের ভারসাম্যে প্রভাব পড়ে, টান পড়ে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভে। আর্থিক খাত আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খেলাপি ও সম্ভাব্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এদিকে, দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা চলতি অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, নতুন বছরে নতুন সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয়েছে সেখানেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েই দ্রব্যমূল্য কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

×