ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভেড়া পালন

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভেড়া পালন

সাধারণত আমরা প্রাণিসম্পদ বলতে গরু, ছাগল এবং মুরগি ইত্যাদিকে বুঝি। কিন্তু গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগি, কবুতর এবং ভেড়াও প্রাণিসম্পদের অংশ এবং গৃহপালিত প্রাণী। ভেড়া পালনে লাভ বেশি, অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়, ভেড়ার উৎপাদন বেশি হলেও ভেড়া পালনের সম্ভাবনা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। জানা গেছে, জাতীয় আয় ও সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের মধ্যে ৪র্থ স্থান অধিকারীর ভেড়া অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু। এ ছাড়াও প্রতিকূল পরিবেশে শুকনা খড় এবং শস্যের অবশিষ্টাংশ খেয়েও জীবন ধারণ করতে পারে। খামার পরিচালনায় খাদ্য খরচ অনেক কম। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অনেক জেলায় ভেড়া পালনের সম্ভাবনা বেশি। যেসব জায়গায় পতিত জমি থাকে বন-জঙ্গল আছে সেখানে পালনের সুবিধাও বেশি। পৃথিবীর সব দেশেরই গৃহপালিত পশু হিসাবে ভেড়া পালন করা হয়। আমাদের দেশেও আদিকাল থেকে কিছু ভেড়া পালন করা হচ্ছে সত্য কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এ দেশে নাই। নোয়াখালী, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী এবং উপকূলীর জেলাসমূহ ভেড়া দেখা যায়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার ১৫ থেকে ২০ কেজি হতে পারে। প্রতিটি ভেড়া থেকে বছরে গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি পশম পাওয়া যায়। যা দিয়ে উন্নতমানের শীতবস্ত্র নির্মাণ করা যায়। ভেড়া উৎপাদন বাড়ার হার শতকরা ১২ ভাগ। যা গরু, ছাগল ও মহিষের চেয়ে অনেক বেশি। এদের বাসস্থানের খরচও কম। নরম, রসালো ও সুস্বাদু ভেড়ার মাংসে আমিষের পরিমাণ গরু ও ছাগলসহ অন্যদের চেয়ে বেশি। ভেড়ার মাংসে জিংক, আয়রন এবং ভিটামিনের পরিমাণ বেশি এবং চর্বি ও কোলেস্টরেল কম। যদিও ভেড়া একটি বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী প্রাণী তারপরও বলা প্রয়োজন ভেড়া একটি অবহেলিত এমনকি বিলুপ্ত প্রাণী হিসাবেও অনেকের কাছে পরিচিত। অথচ তিন দশক আগেও এদেশে ভেড়া পালন করা ও তার মাংস বিক্রির রেওয়াজ ছিল। অকস্মাৎ ভেড়া দিনে দিনে যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ভেড়া দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। এ কারণে গরুর সঙ্গে অতিরিক্ত জনবল ছাড়াই ভেড়া পালন সম্ভব। ভেড়া পালনের বড় সুবিধাটি হলো গরুর সঙ্গে একই খামারে বা ঘরে ছাগল পালন করা যায় না কিন্তু অতি সামান্য খরচ ও সহজ পরিচর্যায় ভেড়া পালন করা যায়। গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক খামার, আছে রফতানির সম্ভাবনাও কম খরচ আর অধিক লাভজনক হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ ভেড়ার খামারের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে এই প্রাণীতে লালন-পালন খরচ ও রোগব্যাধি কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালনের ব্যাপক সুযোগ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। ভেড়ার খামার গড়ে তুলে বেকারত্ব মোচন বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসেবে সারা দেশে ৩৬৩২ ভেড়ার নিবন্ধিত খামার রয়েছে। এর বাইরেও অনেকে অল্প পরিসরে দুই চারটি বা ১০ থেকে বিশটি করে ভেড়া লালন পালন করছে। দেশের প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের কথা বিবেচনায় বর্তমান সরকারের ৩১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশী ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ (কম্পোনেন্ট-বি) প্রকল্প’। প্রকল্পের অধীনে পার্বত্য অঞ্চলের ২৫ উপজেলায় ৫০০ পরিবারের মাঝে ১৫০০ ভেড়া বিনামূল্যে বিতরণ, ১৩০০০ সুফলভোগীকে ভেড়া পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, ১২৮ কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার ভেড়ার খামার তৈরি, সারাদেশে ১৩০০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভেড়ার খামার স্থাপন এবং ভেড়ার মাংস জনপ্রিয় করার নানামুখী প্রচার চালানোসহ প্রকল্পের প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক গড়ে উঠেছে অনেক ভেড়ার খামার। তুলনামূলক কম পুঁজিতে গড়ে তোলা ২০-৩০টি ভেড়ার একটি খামারে বছরে আয় ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা। বিদেশে ভেড়ার মাংস ও পশমের চাহিদা অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিরও প্রচুর সুযোগ রয়েছে। অল্প পুঁজি স্বল্প জায়গায় অধিক লাভ ভেড়া সাধারণত দল বেঁধে চড়ে বেড়ায়, রাত্রে খোয়াড়ে এসে যায়। এরা সারাদিন বাড়ির আশপাশে মাঠ-ঘাটে চড়ে নিকৃষ্ট জাতের ঘাস, খড়-কুটা, জমির ফসল কাটার পর পরিত্যক্ত খড়, আগাছা খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে যা অন্য কোন প্রাণী দিয়ে সম্ভব হয় না। ভেড়ার জন্য গরু-মহিষের মতো তত বড় চারণ ভূমির প্রয়োজন হয় না। গরু-মহিষের মতো বিপুল খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। এরা বাড়ির আশপাশের বা ক্ষেতের আইলের বা পুকুরের ধারের নিকৃষ্ট ঘাস, গাছ-গাছড়ার পাতা, লতা-গুল্ম দিয়ে এদের খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে পারে। তাই কৃষি জমির উপর চাপ সৃষ্টি না করে অল্প জায়গাতেই প্রতিটি পরিবারে কয়েকটি ভেড়া পালন করে আমাদের প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন মেটানো যায়।
×