ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

নিরাপদ বিনিয়োগের নাম সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিরাপদ বিনিয়োগের নাম সঞ্চয়পত্র

মানুষ তার আয়ের পুরোটাই ভোগ করে না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করে। ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পর থেকে ভাবনায় পড়েছেন কমবেশি সবাই। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে সঞ্চয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিকল্প বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর জন্যই নিরাপদ বিনিয়োগের নাম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। আবার নিশ্চিত ও সর্বোচ্চ মুনাফার দিক থেকেও সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে আকর্ষণীয়, অন্তত ব্যাংকে স্থায়ী আমানত এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তুলনায়। ব্যাংকে আমানতের বাইরে দ্বিতীয় পছন্দ সঞ্চয়পত্র। ব্রিটিশ সরকার সেই ১৮৩৪ সালে পোস্টাল সেভিংস ব্যাংক চালুর পর জনগণ কাছের ডাকঘরে গিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে সঞ্চয় করতেন। অনেক পরিবারে এভাবে বিনিয়োগ অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তবে আগের মতো চাইলেই এখন আর কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। অন্তত এক লাখ টাকার বেশি অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) থাকতেই হবে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত অবশ্য ইটিআইএন লাগে না। সব সঞ্চয়পত্রেরই নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেই এ ফরম পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে গ্রাহকদের আগে এ ফরম পূরণ করতে হয়, সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করতে হয় প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীর মাধ্যমে। তবে নমিনির ছবির সত্যায়ন করতে হয় গ্রাহককে। গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিও এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। নমিনি নাবালক হলে লাগে জন্মনিবন্ধনের কপি। এ ছাড়া গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে হিসাবে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে, সে হিসাবের নম্বর লাগে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে লাগে সর্বশেষ বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র বর্তমানে এ চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছরের মেয়াদের। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও দুটি সঞ্চয়পত্রই পাঁচ বছর মেয়াদের। এ ছাড়া রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়। কারা কিনতে পারেন সবাই সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যে কোন বাংলাদেশী নারী, কোন বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারেন না সবাই। অবসরভোগী সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র কেনার এখন আর সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব সঞ্চয়পত্রেরই নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। গ্রাহকদের এ ফরম পূরণ করতে হয়। সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করতে হয় প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীর মাধ্যমে। আর নমিনির ছবির সত্যায়ন করবেন গ্রাহক নিজে। গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। নমিনি নাবালক হলে জন্মনিবন্ধনের কপি লাগবে। আগে না লাগলেও সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে এখন লাগে ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন)। এ ছাড়া এখন লাগে গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে হিসাবে গ্রাহকের সুদ ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ লাগে। সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। এগুলো কেনা যায় জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, সব তফসিলি ব্যাংক ও সব ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যায়। ভাঙানোর দিন গ্রাহককে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১ লাখ টাকায় মাসিক মুনাফা পাওয়া যায় ৮৬৪ টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২ হাজার ৪৮৪ টাকা। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২ হাজার ৬৪৬ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে একেক বছরের জন্য একেক হারে মুনাফা পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে আসল ও মুনাফার টাকা আর নগদে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙালেও টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে। গ্রাহকের মনোনীত ব্যক্তি মুনাফার টাকা তুলতে পারলেও মূল টাকা গ্রাহক ছাড়া অন্য কেউ তুলতে পারেন না।
×