
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কাঁচা মরিচের ঝাঁল আরও বাড়লো। মরিচের ঝাঁজে অস্থির শাক-সবজির বাজার। দাম বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। বাজারভেদে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। মরিচের সঙ্গে বাড়তি অন্যসব শাক-সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। কমেছে রসুনের দাম। এছাড়া ভোজ্যতেল, মশুর ডালের দামও বেড়েছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে আটা, চিনি, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি ও মাছ-মাংসের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট এবং মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবিও নিত্যপণ্যের বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছে। বাজারে এ মুহূর্তে আলোচনার বিষয় কাঁচা মরিচ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে মরিচ আমদানি করেও বাজার সামাল দেয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ছে হু হু করে। বাজারে ২০০ টাকার নিচে কোন মরিচ কেনা যাচ্ছে না। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ ৫০-১০০ গ্রাম করে মরিচ কিনে ঘরে ফিরছেন। এবারের বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে মরিচসহ সবজিখেত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণে শাক-সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। মরিচ যেনো ছুঁয়েই দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া বেগুন, কাঁকরোল, কচুমুখী, চিচিঙ্গা ও ধুন্দলসহ বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।
এ সপ্তায় কাঁচা বাজারে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি হাইব্রিড শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর (আমদানি) ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙা-চিচিঙা-ধন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দেশি শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম বাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জসিম জনকণ্ঠকে বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এ বছর সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন সবজি না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচ আমদানি করার পরও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। দাম কমাতে হলে দেশী মরিচের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। এছাড়া ১০ টাকা বেড়ে প্রতিহালি কাঁচাকলা ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আমদানি করা কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের শাক। এসব বাজারে প্রতি আঁটি (মোড়া) লাল শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, মূলা ও কলমি শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ ও কুমড়া শাক ৪০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, ডাটা শাক ২৫ টাকা।
এদিকে, আগের দাম রয়েছে পেঁয়াজের। প্রতিকেজি পেঁয়াজ দেশী ৩৫-৪৫ এবং আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। দাম কমছে রসুনের। প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়। দাম বেড়ে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিদরে। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। প্রতিলিটার সয়াবিন ৮২-৮৬, পাঁচ লিটারের বোতল ৪৫০-৫১০, মশুর ডাল মোটা দানা ৬৫-৭৫, মাঝারি মানের ৮০-৯০ এবং চিকনদানা ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি। আটা প্যাকেট প্রতিকেজি ৩০-৩৫, চিনি ৫৮-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়ায় দাম কমে প্রতিকেজি ১ কেজি সাইজেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১১০-১২০ এবং ফার্মের ডিমের ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।