ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় বিসিকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ৯ মার্চ ২০২০

 বগুড়ায় বিসিকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল  পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ হালকা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পে এগিয়ে থাকা বগুড়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (শিল্প পার্ক) স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিসিক বগুড়ার শিল্প নগরী কর্তকর্তা এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বিসিকের চেয়ে কয়েকগুণ লাভজনক হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, অনেক শিল্প উদ্যোক্তা বিসিকে স্থান না পাওয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে এবং আবাসিক এলাকায় হালকা শিল্প স্থাপন করছে। বগুড়ায় দ্বিতীয় বিসিক এস্টেট স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনে হারানো শিল্প নগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরকে (২০২০) লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ষ পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। বগুড়ার বিসিক অনেক পুরনো। ১৯৬৪ সালে শহরের উত্তরে ফুলবাড়ি-আটাপাড়া মৌজায় ১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বিসিক কার্যক্রম শুরু হয়। ৭৯ প্লটে ৩৪টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হওয়ার পর আর স্থান সঙ্কুলান হয় না। ১৯৮০ সালে বিসিক সংলগ্ন ১৮ দশমিক ৬৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে আরও ১৫৪ প্লট সৃষ্টি করে বিসিক শিল্প এলাকা সম্প্রসারিত হয়। সেখানে আরও ৫৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বর্তমানে মোট ৯৩টি শিল্প স্থাপনের পর নতুন করে শিল্প স্থাপনের জায়গা নেই। শিল্প উদ্যোক্তারা বিসিকে স্থান না পেয়ে কেউ আবাসিক এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শিল্প ইউনিট গড়ে তুলেছে। অনেক উদ্যোক্তা স্থান অভাবে পুঁজি নিয়ে একক ও যৌথভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছে। কেউ সঞ্চয়পত্র কিনেছে। তাদের কথা প্লট পেলে নতুন করে শিল্প ইউনিট গড়ে তুলতে পারবেন। গত পঁচিশ বছর ধরে বগুড়ায় দ্বিতীয় বিসিক এস্টেট গড়ে তোলার দাবি উত্থাপিত হয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ভারি শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্প সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমিতে বিসিক দ্বিতীয় শিল্প নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। একই মন্ত্রণালয়ের ওই সংস্থার সঙ্গে চিঠি চালাচালি করে। কোন ফল আসেনি। বিসিক গত বছর ২০ মে বগুড়ায় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ডকুমেন্ট (ডিপিডি) তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওই বছর ১৭ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর বগুড়ায় বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত শতকের ষাটের দশক থেকে বগুড়া হালকা প্রকৌশল শিল্পে যান্ত্রিক কৃষি ও সরঞ্জামের বড় বাজারে পরিণত হয়। বগুড়ার কৃষক সেই সময়ে চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। সত্তরের দশকে বগুড়া হালকা শিল্পের সূতিকাগারে পরিণত হয়। কৃষি যন্ত্রাংশের চাহিদার ৮০ শতাংশই পূরণ করে বগুড়া। যা এখনও ধরে রেখেছে। বগুড়ায় কৃষি যন্ত্রাংশ, সেচ পাম্প, ফাউন্ড্রি, হালকা মেশিনারি শিল্পসহ টাইলস ফ্যাক্টরি, পেপার মিল, মিনি জুট মিল, রাইসব্রান তেল ফ্যাক্টরি, ওয়েস্কেল ফ্যাক্টরি, এ্যালুমিনিয়াম, তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছে। বিসিক জানিয়েছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপিত হলে অন্তত এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বগুড়ার দক্ষিণে নাটোর রোডের আশপাশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনে ৩শ’ একর ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা। আশা করা হচ্ছে প্রকল্পটি দ্রুত একনেক বৈঠকে পাস হয়ে কাজ শুরু হবে।
×