ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াইহাজারে ১ হাজার একর জমিতে হচ্ছে জাপান অর্থনৈতিক জোন

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৯ মার্চ ২০১৯

 আড়াইহাজারে ১ হাজার একর জমিতে হচ্ছে জাপান অর্থনৈতিক জোন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকার অদূর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ১ হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হবে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে দেশে জাপানী বিনিয়োগ বাড়বে। জাপানী উদ্যোক্তরা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। এরই মধ্যে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অবশিষ্ট ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি বেজা কার্যালয়ে ‘জাপান ইকোনমিক জোন’র জন্য অধিগ্রহণ করা ৫০০ একর জমির কাগজপত্র বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এদিকে জাপান ইকোনমিক জোন’র ভূমি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেয়েছে জাপানের সুমিতমো কর্পোরেশন। বাংলাদেশ সরকার, জাপান ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইএফসি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশীদার হবে। এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে জাপানের সুমিতমো কর্পোরেশন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত হয়েছে। বেজার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক নির্বাহী সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ৫০০ একর জমি বরাদ্দের বিষয়ে চুক্তি হবে। পরবর্তীতে আরও ৫০০ একর জমি দেয়া হবে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের জমির কাগজপত্র চূড়ান্ত হবে। কারণ দ্বিতীয় ধাপের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। গত ৫ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় দুই হাজার ৫৮২ কোটি টাকার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রাথমিকভাবে ৫০ বছরের জন্য জাপানের সুমিতমোকে এই জমি দেয়া হবে। পরবর্তীতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী চুক্তির মেয়াদ বাড়বে। প্রকল্পে বেজার ২৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে। বাকি ৭৬ শতাংশের অংশীদার হবে বিনিয়োগকারী আইএফসি ও সুমিতমো। জাপানের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান সুমিতমো ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে এ ধরনের প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশেও রয়েছে জাপানের ২৫০টির বেশি কোম্পানির কার্যক্রম। নতুন করে সুমিতমো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হলে দেশে জাপানী বিনিয়োগে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে বেজা। হারুনুর রশিদ আরও বলেন, বিনিয়োগের ধরন কেমন হবে তা ঠিক করবে জাপান কর্তৃপক্ষ। তবে জাপানী বিনিয়োগকারীরা যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অগ্রাধিকার পাবেন এটা নিশ্চিত। জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ চুক্তি বাংলাদেশের বিনিয়োগে একটি বড় খবর উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন দেশে জাপানী বিনিয়োগের অর্থই হচ্ছে সেই দেশে উপযুক্ত বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে সেটার ইঙ্গিত দেয়া। ফলে অন্যান্য দেশও সেখানে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। এদেরে অবকাঠামো খাতে দেশটির বিনিয়োগের কারণেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঢাকার যানজট কমাতে মেট্রোরেল রেল চালু হচ্ছে জাপানী অর্থায়নে। তিনি বলেন, এদেশের উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের জন্য জাপানী বিনিয়োগকারীরা মুখিয়ে আছেন। এদেশে জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পাওয়ায় সেখানকার বিনিয়োগ আরও আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করছি অর্থনৈতিব অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে। এদিকে ১৫ বছরের মধ্যে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপরেখা বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন বেজা। এরই মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ভোলা, কক্সবাজার, বাগেরহাট, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে বেজা।
×