ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদ্যমান বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে কারসাজি করা সম্ভব হওয়ায় অনেকেই সেদিকে ঝুঁকছে। এমতাবস্থায় পদ্ধতিটি শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই এই বাজারের স্বার্থে পদ্ধতিটির সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এছাড়া পদ্ধতিটির অপব্যবহারে এরই মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) আলোচনা শুরু হয়েছে। এরই আলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পদ্ধতিটির সংশোধনী আনতে পারে বলে জানা গেছে। প্রিমিয়ামসহ শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ তে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই পাবলিক ইস্যু রুলস জারি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বিডিংয়ে অংশ নেয়া সবাই কাট-অফ প্রাইসে শেয়ার পাওয়ার অধিকারী। যা একটি কোম্পানির কাট-অফ প্রাইসের যোগ্যতা সঠিকভাবে মূল্যায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। বুক বিল্ডিংয়ের সংশোধনী চেয়ে বিএসইসিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএমবিএর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে বিএমবিএর বিভিন্ন সদস্য বুক বিল্ডিংয়ের সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব করবেন। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে জমা দেয়া হবে। বিডিংয়ের অপব্যবহার বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনকে বিভিন্ন সময় সমালোচনা করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে। আর এই অপব্যবহার রোধে বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি স্থগিত বা বন্ধ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত এক সেমিনার ও ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ এর উদ্বোধনীতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সঠিক কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে সর্বোচ্চ দর নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঠিক করে দেয়া উচিত। বিডিংয়ে ওই দরের ওপর কাট-অফ প্রাইস হবে না। এক্ষেত্রে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের দর প্রস্তাবে কাট-অফ প্রাইস নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই নির্ধারিত দরের মধ্যে হবে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ দর নির্ধারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শেয়ার প্রতি সম্পদকে (এনএভিপিএস) বিবেচনায় নিতে পারে। এছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা নিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যাদেরকে ইলিজিবল বা যোগ্য বিনিয়োগকারী বলা হচ্ছে, এরা আসলে যোগ্য নয়। বিডিংয়ে এরা পাতানো ম্যাচ খেলে। তাই সবার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে বিডিংয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ কোটা কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের কোটা ৫০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা যেতে পারে। আর এসব বিনিয়োগকারীর শেয়ারে কমপক্ষে ১ বছরের লক ইন রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ম্যানুপুলেশন কিভাবে খুঁজে বের করা যায়, তা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তাদের প্রস্তাবিত দরের যথার্থতা যাছাই করা যায়। এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, কোন কোম্পানির বিডিংয়ে যদি যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তার প্রস্তাবিত দরেই শেয়ার নিতে হয় এবং কাট-অফ প্রাইসের নিচে প্রস্তাবকারীদের শেয়ার দেয়া না হয়, তাহলে যৌক্তিক দর মূল্যায়ন হবে। এছাড়া বিডিং চলাকালীন দর প্রস্তাবের তথ্য গোপন রাখতে হবে। তিনি বলেন, ধরুন উদাহরণস্বরূপ একটি কোম্পানির নিলামে ৬০ টাকা থেকে ২০ টাকা দর প্রস্তাব হয়েছে। আর কাট-অফ প্রাইস হয়েছে ৩৫ টাকা। এক্ষেত্রে যদি বিডিংয়ে ৬০ টাকায় দর প্রস্তাবকারীকে ওই দরে শেয়ার নিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে সে ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে যৌক্তিক দর প্রস্তাব করবে। কারণ অন্যরা তার চেয়ে কম দরে শেয়ার পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম (এফসিএমএ) বলেন, চলমান বুক বিডিংয়ে বুক বিল্ডিং সিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এটি সংশোধন করা না হলে ভবিষ্যতেও অতিমূল্যায়িত কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হবে। তাই শেয়ারবাজারের স্বার্থে অবশ্যই এটি সংশোধন করা উচিত। এর আগে বিতর্কের মুখে ২০১১ সালে এমজেএল বাংলাদেশের পরে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই পদ্ধতিটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালুর পরে এ পর্যন্ত ৬টি কোম্পানির নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে - আমরা নেটওয়ার্ক, বসুন্ধরা পেপার মিলস, আমান কটন ফাইবার্স, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, রানার অটোমোবাইলস ও এডিএন টেলিকম।
×