ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর সুষম উন্নয়ন সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মানবসম্পদ উন্নয়নে এগিয়ে থাকার পর এবার ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রেও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ । ক্ষধা দূরীকরণে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এবার ৮৬তম, যা গত বছর ছিল ৮৮তম। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০১৮ তে এ তথ্য মিলেছে। যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে ক্ষুধার সংজ্ঞা নির্ধারণে চারটি সূচককে আমলে নেয়া হয়েছে। অপুষ্টি, খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা, কৃশকায় বা শীর্ণকায় শিশু ও শিশু মৃত্যুর হার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় তিন ধাপ পিছিয়েছে ভারত; গত বছর ভারতের অবস্থান ছিল ১০০ নম্বরে, এবার ১০৩ নম্বরে। ভারতের চেয়েও তিন ধাপ পেছনে ১০৬ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটি গত তিন বছর ধরে একই অবস্থানে রয়েছে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে নেপাল (৭২), মিয়ানমার (৬৮) ও শ্রীলঙ্কা (৬৭)। এবার সূচকে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে থাকা তিন দেশ হলো বেলারুশ, বসনিয়া ও চিলি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে মধ্য আফ্রিকা ও ইয়েমেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু ও এ দুটি দেশের চেয়ে বেশি। মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যু, স্কুলে পাঠ গ্রহণ এসব খাতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে মাথা পিছু গড় আয় বাংলাদেশের অনেক কম। বাংলাদেশের মানুষ ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের চেয়ে গড়ে বেশি দিন বাঁচে। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর। গড় আয়ু ভারতে ৬৮ দশমিক ৮ বছর ও পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৬ বছর । নবজাতক-মৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে ও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এক হাজার জীবিত শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ২ জন নবজাতক মারা যায়। ভারত ও পাকিস্তানে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ৬ এবং ৬৪ দশমিক ২। একইভাবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে ও বাংলাদেশ ভাল করেছে। বাংলাদেশে ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে পঁাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ২ জন মারা যায়। পাকিস্তানে তা দ্বিগুণের বেশি, ৭৮ দশমিক ৮ জন। আর ভারতে ৪৩ জন। সন্তান প্রসবজনিত মাতৃ মৃত্যু হারে অবশ্য তিন দেশই কাছাকাছি অবস্থানে। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে পিছিয়ে, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ গর্ভবতী মায়ের মধ্যে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গড়ে ১৭৬ জন মারা যান। ভারত ও পাকিস্তানে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১৭৪ ও ১৭৮। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার অবশ্য এখন ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। ভারতে তা ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ ও পাকিস্তানে ৫৭ শতাংশ। অথচ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে ওই দুটি দেশের চেয়ে কম খরচ করে। নারীর ক্ষমতায়নে ও এগিয়ে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বেশি। বাংলাদেশে সংসদে যত আসন আছে, এর মধ্যে ২০ দশমিক ৩ শতাংশই নারী প্রতিনিধি । পাকিস্তানে তা ২০ শতাংশ এবং ভারতে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। তাছাড়া ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার বিদ্যমান মান বিবেচনা করলে বাংলাদেশের শিশুরা ভারত ও পাকিস্তানের শিশুদের চেয়ে বেশি উৎপাদনশীল হবে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের মানবসম্পদ সূচকে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এই সূচক অনুযায়ী, ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৬তম। ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১১৫ ও ১৩৪তম। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলমান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) যৌথ বার্ষিক সভায় বিশ্বব্যাংক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ ভাল করেছে। আর ও ভাল করার সুযোগ আছে। কেননা, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে থাকলে ও অন্যদেশগুলো আর ও অনেক ভাল করছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার, শিশুদের স্কুলে পাঠ গ্রহণের সময়কাল, শিক্ষারমান, প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা এবং শিশুদের সঠিক আকারে বেড়ে ওঠাসহ বেশ কয়েকটি সূচক দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আদর্শ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেলে একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে শতভাগ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারে। কিন্তু নিজ নিজ দেশে ভিন্ন ভিন্ন মানের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বেড়ে ওঠে শিশুরা। তাই সবাই সমানভাবে শত ভাগ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারে না। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের একজন শিশু বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গড়ে ৪৮ শতাংশ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারবে। আদর্শ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেলে তারা শতভাগ কর্মদক্ষতা দেখাতে পারত, সেখানে তারা অর্ধেকের কম দেখাতে পারবে। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তান এক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে। ভারতের শিশুরা ৪৪ শতাংশ ও পাকিস্তানের শিশুরা ৩৯ শতাংশ কর্মদক্ষতা দেখাতে পারবে।
×