ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাটের সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা খ্রীস্টান মিশন পল্লীর নারী-পুরুষ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

পাটের সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা খ্রীস্টান মিশন পল্লীর নারী-পুরুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা ॥ পাটের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা খ্রীস্টান মিশন পল্লীর নারী-পুরুষ। প্রত্যেকদিন কাজের অবসরে তারা চাহিদা মতো পাটের সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কার্পাসডাঙ্গা খ্রীস্টান মিশন পল্লীতে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার স্বর্গীয় বিশু মন্ডলের স্ত্রী সুলেখা মন্ডল (৬০) বাড়ির উঠানে ম্যাটের অংশ বিশেষ তৈরি করছেন। ৪০ বছর এ কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি। ৭০-৮০ টাকা দরে পাট কিনে এনে তিনি চাহিদা মতো সামগ্রী বানিয়েই চলেছেন। অবসর সময় অন্য কাজে ব্যয় করতে তিনি নারাজ। পাশের বাড়ির সৌম মন্ডল (৬৭) ও তার স্ত্রী গীতা মন্ডল (৬০) ৪০ বছর ধরে পাটের সামগ্রী তৈরিতে খুবই ব্যস্ত রয়েছেন। গ্রাহকের চাহিদা মতো তাদের পণ্য বানিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন তারা। গীতা মন্ডল জানালেন, ৩০০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২০০ সেন্টিমিটার চওড়া পাট দিয়ে তৈরি একটি কার্পেট টুকরো টুকরো অংশ জুড়ে পরিপূর্ণরুপ আনা লাগে। কর্মীদের দিয়ে ওই অংশগুলো তৈরি করে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়। ১০৮টি অংশ তৈরি করা হয় প্রতিটি ৭৩ টাকা দরে, ৯০টি ছোট চার কোনা তৈরি করা হয় প্রতিটি ২৬ টাকা দরে, ৩০টি তিন কোনা তৈরি করা হয় প্রতিটি ১৫ টাকা দরে, ৭টি পাঁচ কোনা তৈরি করা হয় প্রতিটি ৫০ টাকা দরে ও শেষের অংশ ২টি সেলাই করা হয় ২০০ টাকা দরে। তারপর রঙ করে গ্রাহককে সরবরাহ করতে হয়। কর্মীরা এই অংশগুলো যে যত তৈরি করতে পারবে সে তত টাকা রোজগার করতে পারবে। তিনি আরও জানান, গ্রাহদের চাহিদা মোতাবেক পাট দিয়ে তৈরি করা হয় ঘরের আড়াই টাঙ্গানো শিকা ও তার ভেতরকার বাক্স, পাখি, মাছ, মেয়েদের ব্যবহৃত হাত ব্যাগ, বালতি, ফুলদানি ইত্যাদি। কাজের অবসরে এ কাজ করে একজন কর্মী প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা রোজগার করতে পারছে। খ্রীস্টান মিশন পল্লীর ডানিয়েল মন্টুর স্ত্রী মহিলা সমিতির সম্পাদিকা বুলবুুলি (৬৫) জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে মেহেরপুুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার খ্রীস্টান মিশনারির মাধ্যমে এ কাজগুলো করানো হয়। গ্রাহকদের চাহিদা মতো বিভিন্ন রকম কাজ করতে হয়। এ কাজে প্রয়োজনীয় শুকনো পাট ফরিদপুর ও গোপলগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ও খুলনা থেকে সংগ্রহ করা হয়। কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাটগুলো কেনা পড়ে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ব্যাজে ৫০ জন নারী-পুরুষ এ কাজের সঙ্গে সংপৃক্ত। এসব সামগ্রী দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যায় বলে তিনি জানান। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে এ ধরনের একটি ভাল উদ্যোগ মিশন পল্লীতে চালু থাকলেও সরকারীভাবে এ পৃষ্টপোষকতা না থাকার কারণে এ কাজের বিকাশ ঘটছে না। সরকারী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও নারী-পুরুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত ঘটালে এ এলাকার বেকার সমস্যা লাঘব হবে বলে তিনি দাবি করেন।
×