ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরার আম এবারও রফতানি হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

সাতক্ষীরার আম এবারও রফতানি হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি মৌসুমেও সাতক্ষীরার আম রফতানি হবে ইউরোপের বাজারে। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে আগোরা, স্বপ্নসহ দেশের নাম করা সব সুপার শপে। এ জন্য স্বাদে, গুণে ও মানে বিখ্যাত আমের চাহিদা মেটাতে জৈব পদ্ধতিতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার চাষীরা। গাছে গাছে দুলছে চাষীর স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমেও আম রফতানিতে দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকবে সাতক্ষীরা। বিপ্লব ঘটবে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৪০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। আর সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমেও সাতক্ষীরার আম রফতানি হবে ইতালী, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানী, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিষমুক্ত আম উৎপাদনে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও কলারোয়া উপজেলার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে আশাশুনি ও তালা উপজেলা। এসব উপজেলার বাছাইকৃত পাঁচ শ’ চাষীকে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে দেয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। জৈব সার, আর্সেনিকমুক্ত পানি ও মাছি-পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ দিয়েই চলছে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ। তবে, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়া ও বাড়তি তাপমাত্রার কারণে অনেক বাগানেই আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এতে কিছুটা চিন্তিত চাষীরা। আম বাগানের যতœ নিচ্ছেন চাষী যদিও এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করছে কৃষি বিভাগ। সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। এ জেলার আম অন্যান্য জেলার চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে পাকে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রফতানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের আম চাষী লিয়াকত আলী জানান, তার ১৫ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। রফতানির লক্ষ্যে তার বাগানে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হচ্ছে ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম। তিনি আরও জানান, তার বাগান থেকে গত মৌসুমে চার মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছিল। কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ বছরও আম রফতানির আশা করছেন তিনি। এ বিষয়ে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণের সফল প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার মেহেদী হাসান জানান, রফতানির লক্ষ্যে মৌসুমের শুরুতেই বিষমুক্ত আম উৎপাদনে পাঁচ শ’ চাষীকে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে আম রফতানির জন্য নতুন কয়েকটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে গাছ থেকে আম পাড়া, পচনরোধে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ওপর চাষীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এসব কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সহযোগী সংস্থা ও সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তিনি আরও জানান, রফতানির পাশাপাশি রাজধানীর সুপার শপগুলোও সাতক্ষীরার আম নিতে যোগাযোগ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলার আমের সুনাম বিদেশেও রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসের মাঝামাঝিতে সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি ও মল্লিকা রফতানি হবে ইউরোপের বাজারে। এ বছর রফতানির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
×