ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চূড়ান্ত স্বাক্ষরের অপেক্ষায়

অবৈধ পিকচার টিউব ছাড়াতে বাণিজ্যিক অনুমতি!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৮ মার্চ ২০১৮

 অবৈধ পিকচার টিউব ছাড়াতে বাণিজ্যিক অনুমতি!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আটক অবৈধ পিকচার টিউব ছাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ তদবিরে ‘কমার্শিয়াল পারমিশন’ দিতে যাচ্ছে। এই অনুমতি সংবলিত একটি চিঠি বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রীর চূড়ান্ত স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। জানা যায়, এক এমপির তদবিরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চীনে ফেলে দেয়া পুরনো টেলিভিশনের পিকচার টিউব পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি দামে কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে আমদানি করে। সাতজনের একটি চক্র এই অবৈধ পিকচার টিউব ছাড় করার জন্য বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চৌকস শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আমদানিকৃত এসব অবৈধ পিকচার টিউব বন্দরে আটকে দেয়। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে টেলিভিশনের যন্ত্রাংশ আমদানি করা এই চক্রটি এ যাত্রায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রায় দুই লাখ পিস পুরনো পিকচার টিউব আমদানি করে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় চীন এসব পিকচার টিউব ডাম্পিং করার জন্য স্থান খুঁজছিল। সেই সুযোগটিই বাংলাদেশের এই চক্রটি গ্রহণ করে। দুই ডলার মূল্যের প্রতি পিস পিকচার টিউব এই চক্রটি ১০ থেকে ১৫ ডলার মূল্যে আমদানি করেছে। আর এর মাধ্যমে এই চক্রটি প্রতি পিকচার টিউবে ৮ থেকে ১৩ ডলার করে পাচার করেছে। এসব অবৈধ পিকচার টিউব আমদানির পর শুল্ক গোয়েন্দারা আটকে দেয়ায় চক্রটি প্রথম দফা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। পরবর্তীতে এক এমপির মধ্যমে তারা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব পিকচার টিউব ছাড় করাতে বাণিজ্যিক অনুমতি (কমার্শিয়াল পারমিশন) পাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। জানা যায়, ওই এমপির সহযোগিতায় এক লাখ ৩ হাজার পিস অবৈধ পিকচার টিউব ছাড় করাতে বাণিজ্যিক অনুমতি পাওয়ার জন্য আমদানির কাগজপত্রসহ আবেদন করে। জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্যিক অনুমতির প্রদান করা হয়নি। এই প্রথম এই সরকারের আমলে বাণিজ্যিক অনুমতি দেয়া হচ্ছে। অথচ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হওয়ায় এসব পিকচার টিউব আমদানি নীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক অনুমতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এবং জনগণের স্বার্থে কোন আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি জরুরী হয়ে পড়ে তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাণিজ্যিক অনুমতি দিতে পারবে। কিন্তু এসব পুরনো পিকচার টিউব যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে অন্য দেশ ফেলে দিয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের কোন জরুরী প্রয়োজনে আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে? জানা যায়, এই চক্রটি প্রায় দুই লাখ পিস এসব অবৈধ পিকচার টিউব আমদানি করে। এরমধ্যে নানাভাবে ৩৩ হাজার পিস ছাড়িয়ে নিয়েছে। এসব পিকচার টিউবের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য আনবিক শক্তি কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু এখানেও ওই চক্রটি অসৎ উপায় অবলম্বন করে। অর্থের বিনিময়ে পথিমধ্যে স্যাম্পল পরিবর্তন করে ফেলা হয়। পুরনো পিকচার টিউবের পরিবর্তে সেখানে নতুন পিকচার টিউব দিয়ে দেয়া হয় স্যাম্পলে। যাতে পরীক্ষার ফল ভাল আসে। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতেই এই ৩৩ হাজার পিকচার টিউব ছাড় করানো হয়। এখন এক লাখ তিন হাজার পিস ছাড় করানোর জন্য বাণিজ্যিক অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের উদ্যোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এসব পুরনো পিকচার টিউব শুধু জনস্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করবে না, বাংলাদেশের টেলিভিশন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিভিশন উৎপাদন শিল্প। তারা উদ্যোক্তারা এসব অবৈধ পিকচার টিউব ছাড় করতে বাণিজ্যিক অনুমতি প্রদান না করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জােিয়ছেনন।
×