ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়ে হাঁসের খামার

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

হাওড়ে হাঁসের খামার

মাধবপুরে হাওড়ে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে হাঁস পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা, পরামর্শ এবং সরকারিভাবে খামারিদের মধ্যে ব্যাংক ঋণ ব্যাপক আকারে হাওড়ে হাঁস পালন বৃদ্ধি পাবে। হাওরে হাঁস পালন হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ডিমের চাহিদা পূরণ হবে। কৃষক পর্যায়ে কমবেশি প্রতিটি ঘরেই সীমিত আকারে হাঁস পালন হয়ে থাকে। কিন্তু গত ৫ বছর ধরে বিশাল হাওড়জুড়ে সীমিত পর্যায়ে ৫০টির মতো হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। দিন দিন এর খামার বেড়েই চলেছে। ডিমের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক বেকার লোক অন্যান্য খামারিদের অনুসরণ করে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছে। বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁসের বাচ্চা কেনা হয়। বাচ্চা রাখার জন্য হাওড় এলাকায় উঁচু ভূমিতে ছোট খামার তৈরি করা হয়। মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর, জগদীশপুর, বাঘাসুরা, বুলা, ছাতিয়াইন, আন্দিউড়া, নোয়াপাড়া ভাটি এলাকায় হাঁসের খামার রয়েছে বেশি। এসব ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমি বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন এসব ভূমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। খামারিরা এসব পতিত হাওড়ে হাঁসের খামার গড়ে তোলে অনেকেই সফল হয়েছেন। হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন পুঁজির প্রয়োজন হয় না। স্বল্প পরিসরে অল্প পুঁজিতে এসব খামার গড়ে তোলা যায়। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটপর্যায়ে একটি হাঁসের খামার গড়ে তুলতে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি হলেই গড়ে তোলা সম্ভব। মাধবপুর উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৫০টির বেশি হাঁসের খামার রয়েছে। যা থেকে প্রতিদিন ডিম সংগ্রহ করে পুষ্টির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সফল খামারি মইন উদ্দিন জানান, বৈশাখ মাসে বাচ্চা তুলে হাঁসের খামার গড়ে তুলেন। তার খামারে এখন ৬শ অধিক হাঁস রয়েছে। ৬-৭ বছর ধরে সে হাওড় এলাকায় এ খামার পরিচালনা করছেন। হাওড়ে হাঁস পালনে তেমন খরচ নেই। প্রাকৃতিকভাবেই হাঁস শামুকসহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার নিজেরা খেয়ে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে গম, চাল, তেলের খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া, ধান খাবার হিসেবে দিতে হয়। এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বাচ্চা পালনের পর ২-৩ মাস পর থেকেই ডিম দেয়া শুরু হয়। একটি ছোট খামারে ২ জন শ্রমিক হলেই হাঁসের লালন পালন ও দেখভাল করতে পারেন। জগদীশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, মাধবপুরের ভাটি এলাকায় পতিত জায়গায় বর্ষা মৌসুমে হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ডিমের পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব। কারণ বর্ষা মৌসুমে এসব জমি পানির নিচে এমনিতেই পড়ে থাকে। এসব জমি কৃষকের কোন কাজে আসে না। সরকারীভাবে খামারিদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে হাঁসের খামার সম্প্রসারণ করলে এলাকার খামারিরা আরো বড় পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তুলে লাভবান হতো। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে এসব জমিতে ধান উৎপাদন হয় না। বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তাই হাঁসের খামার সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের কোন বাধা নেই। মাধবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সঞ্জিব সূত্রধর জানান, মাধবপুরে বিভিন্ন হাওড় ও ছোট ছোট খালে প্রায় ৫০টির বেশি হাঁসের খামার রয়েছে। যা থেকে দেশি ডিম উৎপাদিত হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের সব রকম পরামর্শ ও হাঁসের চিকিৎসা সুবিধা ও ওষুধ দেয়া হয়। তবে কৃষকদের সরকারীভাবে কৃষি ঋণসহ, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করলে হাওড়ে হাঁস পালন দেশে নতুন মডেল হতে পারে।
×