ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিডিপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না আইপিও অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৪ জুলাই ২০১৭

জিডিপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না আইপিও অনুমোদন

অপূর্ব কুমার ॥ দেশের পুঁজিবাজারে নতুন টাকার প্রবাহ বাড়ছে। নতুন টাকা প্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন শেয়ারের চাহিদাও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই হারে নতুন ভাল শেয়ারের অনুমোদন হয়নি। ফলে দুর্বল শেয়ার অতিমূল্যায়িত হওয়ার কারণে ঝুঁকিও বাড়ছে। অন্যদিকে জিডিপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না বাজার মূলধন। অথচ কোন অর্থনৈতিক ভিত্তিই বোঝা যায় বাজার মূলধনের পরিধি দেখে। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় শেয়ারবাজারের মূলধনের পরিমাণ খুবই কম। এর মধ্যে আবার দেশের জিডিপি নিয়মিতভাবে বাড়লেও শেয়ারবাজারের মূলধন আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। যাতে জিডিপির তুলনায় শেয়ারবাজারের মূলধন আরও কমছে। এছাড়া আইপিও অনুমোদন কমে যাওয়া আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ছয় বছরে (২০১০-১৬) বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বড় হয়েছে। এ সময়ে জিডিপির আকার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে জিডিপির অনুপাতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে। ২০১০ সালে জিডিপির অনুপাতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫০.৭০ শতাংশ। তবে গত ৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে এ অনুপাত। যা ২০১৬ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ১৯.৭০ শতাংশে। সে হিসাবে ৬ বছরে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অনুপাত কমেছে ৬১ শতাংশ। জিডিপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইপিও অনুমোদন বাড়ানো প্রয়োজন হলেও তা উল্টোদিকে না কমেছে। দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ১৭টি কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে ৮টি বা ৪৭ শতাংশ কমে ৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। যা চলতি বছরে আরও নাজুক অবস্থা। এরই মধ্যে বছরের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে গেলেও মাত্র ৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৩৯০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে। অপরদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮৫৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে মূলধন উত্তোলনের পরিমাণ কমেছে ৫৫ শতাংশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্তকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণের কারণে বিএসইসির কর্মকর্তারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণে থাকেন। যে কারণে আইপিও অনুমোদন কমে গেছে। এছাড়া আইপিও অনুমোদন দেয়া নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। তারা আরও জানান, আইপিও অনুমোদনের জন্য প্রযোজ্য শর্তের বাহিরেও বিএসইসি অহেতুক অনেক বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। এতে করে আইপিও অনুমোদনে অনেক জট বেঁধে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএসইসির কি লাভ, তা বোধগম্য নয়। তবে কমিশনের লোকবল সংকট রয়েছে দাবি করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসির লোকবলের সীমাবদ্ধা রয়েছে। অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে পুঁজিবাজারের সংস্কারসহ যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনা করা হয়। কমিশনের লোকবল বাড়ালে বিভিন্ন কাজে আরও গতি আসবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেতে ৩-৪ বছর লাগা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি ভাল বলতে পারবে না। এছাড়া এত বেশি সময় লাগা ঠিক না বলে জানান। তাই এসব বিষয়গুলো বিএসইসির দেখা উচিত। দেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ভাল কোম্পানি আনতে বিএসইসির উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করেন এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। একই সঙ্গে সরকারী বিভিন্ন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার জন্য সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেয়া উচিত। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল মারুফ মতিন বলেন, আইপিও অনুমোদনের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমানো হয়েছে। বিষয়টি খুব খারাপ হয়েছে। অবশ্যই আইপিও অনুমোদন বাড়ানো দরকার। না হলে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। এতে বাজারে ঝুঁকি বাড়ার সুযোগের সৃষ্টি হয়। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আমাদের বাজারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। বেশি বেশি আইপিও বাজারের উন্নয়ন ঘটাবে। সেকেন্ডারি মার্কেটের জন্য আইপিও ক্ষতিকারক বলে মনে করি না। বাংলাদেশের মতো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ কিংবা ভারত কিভাবে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে এনেছে, তা আমাদের জন্য অনুকরনীয় হতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস, দেশের গর্বনেন্স লেভেল উন্নয়নের সাথে সাথে ভবিষ্যতে আইপিও প্রক্রিয়া অনেক সহজতর হবে। বিএসইসির মূখপাত্র ও নির্বাহি পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, সাধারণত কোম্পানিগুলো ইস্যু ম্যানেজারের মাধ্যমে জন্য প্রসপ্রেক্টাস জমা দেয় আইপিও অনুমোদন পেতে। কমিশন এই প্রসপ্রেক্টাস যাচাই বাছাই করে বেশিরভাগ সময় কোম্পানিগুলোর কাছে বিস্তারিত জানতে চায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আবেদন করা কোম্পানি ও তার ইস্যু ম্যানেজার তথ্য পাঠাতে দেরি করে থাকে। মূলত তাদের তথ্য পাঠানোর দেরির কারণে কিছুটা সময় লেগে যায় আইপিও অনুমোদন পেতে। উল্টো অনেকে অভিযোগের সুরে বলে থাকেন কমিশন আইপিও অনুমোদন দিতে দেরি করে থাকে। কিন্তু সেটি সঠিক নয়। কারণ ইস্যু ম্যানেজার ও কোম্পানির তথ্য পাঠানোর দেরির কারণেই এমনটি ঘটে থাকে। ইস্যু ম্যানেজাররা তথ্য তাড়াতাড়ি পাঠালে আইপিও অনুমোদন পেতে সময় লাগবে না।
×