ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন ও বিক্রি কমছে দেশবন্ধু পলিমারের

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৭ মার্চ ২০১৭

উৎপাদন ও বিক্রি কমছে দেশবন্ধু পলিমারের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কারখানার ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারছে না দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড। একই সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য পিপি ওভেন ব্যাগের চাহিদা কমে গেছে। প্রায় তিন বছর ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন ও বিক্রি কমছে। দুই বছরের ব্যবধানে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির নিট মুনাফা ৮১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই বাজারে পিপি ওভেন ব্যাগের চাহিদা ও দাম নিম্নমুখী। এর ওপর কারখানার ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সঙ্কট থাকায় উৎপাদন সক্ষমতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ কারণে কোম্পানির উৎপাদন ও বিক্রি নিম্নমুখী। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটি কোন ব্যাগ রফতানি করতে পারেনি। অন্যদিকে কোম্পানির পরিচালন ব্যয় না কমায় মুনাফা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। তবে গ্যাস সঙ্কট কাটিয়ে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে কোম্পানির পর্ষদ। দেশবন্ধু পলিমারের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগের বছরের তুলনায় সর্বশেষ হিসাব বছরে দেশবন্ধু পলিমারের পিপি ওভেন ব্যাগের উৎপাদন ২৮ লাখ ২০ হাজার ৯০৬ পিস কমেছে। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির পিপি ওভেন ব্যাগ উৎপাদিত পিপি ব্যাগের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৫, আগের বছর যা ছিল ২ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৯টি। ব্যাগ উৎপাদন কমার পাশাপাশি এ সময়ে কোম্পানির বিক্রি কমেছে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬ হিসাব বছরে দেশবন্ধু পলিমারের মোট বিক্রি হয়েছে ৫৬ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৪ সালে কোম্পানির মোট বিক্রি ছিল ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট বিক্রি ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমেছে। বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানি জানায়, স্থানীয় বাজারের চাহিদা কমার পাশাপাশি রফতানিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশবন্ধু পলিমারের নিট বিক্রি কমেছে। ২০১৫ সালে দেশের বাইরে ৪ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকার পণ্য রফতানি করলেও সর্বশেষ হিসাব বছরে তাদের রফতানি শূন্যে নেমে এসেছে। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি ৫৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা থেকে কমে ৫৬ কোটি ২৩ লাখে নেমে এসেছে। এর আগে ২০১৪ সালে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য রফতানি করে কোম্পানিটি। পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাওয়ার সমান্তরালে পরিচালন ব্যয় না কমায় দেশবন্ধু পলিমারের নিট মুনাফা অনেক বেশি কমেছে। দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ৮১ দশমিক ৬৪ শতাংশ বা প্রায় ৪ কোটি টাকা কমেছে। সর্বশেষ হিসাব বছরে তাদের কর পরবর্তী মুনাফা হয় ১ কোটি ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে যা ছিল ৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে এ কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয় ১৯ পয়সা, দুই বছর আগে অর্থাত ২০১৪ সালে যা ছিল ৯৫ পয়সা। ২০১৫ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪১ পয়সা। এদিকে আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকে লোকসানে থাকলেও চলতি হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা দেখিয়েছে দেশবন্ধু পলিমার। গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশবন্ধু পলিমারের ইপিএস হয়েছে ৩৮ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৯ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১১ টাকা ২২ পয়সা। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার দেশবন্ধু পলিমারের সর্বশেষ দর ছিল ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে এর শেয়ার দর ৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৮ টাকা ১০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে। দেশবন্ধু গ্রুপের কোম্পানিটি পিপি ওভেন ব্যাগ উৎপাদন করে। ২০০৭ সালে তাদের কারখানা চালু হয়। ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে আসা এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৫৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ আছে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে, প্রতিষ্ঠান ৮ দশমিক ৪১ ও বাকি ৫৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
×