ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এটিকে প্রণোদনা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব দিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী

ফ্ল্যাট ক্রেতাদের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফ্ল্যাট ক্রেতাদের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন নয়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ফ্ল্যাট ক্রেতাদের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করতে এনবিআর ও দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলের মেজবান হলে রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৭ এর উদ্বোধনীতে এ মন্তব্য করেন তিনি। আবাসন শিল্প খাতে ‘প্রণোদনা’ দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে ‘টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করার’ বিষয়টি অবতারণা করেন মন্ত্রী মোশাররফ। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে না চাওয়াকেই ‘প্রণোদনা’ দাবি করা গৃহায়নমন্ত্রী সেই প্রণোদনা অবশ্যই দিতে জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তার দ্বিমতের কথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৪ শতাংশ কর দিয়ে হাউজিং সেক্টরের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সিমেন্ট, রড, টাইলস, গ্লাসসহ ভবন নির্মাণের যাবতীয় সামগ্রির কর ও ভ্যাট দিতে হয়। এরপরও এনবিআর এবং দুদক এসে প্রশ্ন করে ‘এত টাকা পাচ্ছেন কোথায়?’ তিনি বলেন, পাবলিক সেক্টরে রিহ্যাবের অবদান যথেষ্ট। এ সেক্টর সৃষ্টি না হলে সরকারের একার পক্ষে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়া সম্ভব হতো না। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে সে অনুযায়ী জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলেও খুব একটা শস্য ফলানোর ক্ষেত ধানি জমি ও বিল দৃশ্যমান হয় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়িঘর নির্মাণও বাড়ছে। পূর্তমন্ত্রী বলেন, আবাসন খাতকে এগিয়ে নিতে এবং সমৃদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের ৭৫ ভাগ উপজেলায় পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোটখাট ভবন বাদ দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামাঞ্চলও নগরায়ন হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, শহরকে সুন্দর নগরীতে পরিণত করতে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এতে পরিবেশ রক্ষাসহ সৌন্দর্য বাড়বে। আমরা ভবন নির্মাণ করব। সিটি কর্পোরেশন কখন বর্জ্য অপসারণ করবে সে অপেক্ষায় থাকার সময় নেই। ভবন নির্মাণ কাজের সময় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। এ খাতে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে আবাসন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারকে কিছু প্রণোদনা দিতে হবে। প্রণোদনা মিনস-এখন এই যে, রাজউকের এ্যাপার্টমেন্ট কিনবে; অনেকে বলছে- আপনার কি হোয়াইট মানি আছে? এ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন? ওয়াইট মানি না থাকলে তো আপনি কিনতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু রাজউকের যারা অফিসার, তারাই বলছেন। বিকজ দে ডোন্ট ওয়ান্ট ইট। তাদের লাভ হলো জমিতে, তাই ডিসকারেজ করে। এখন আপনার হোয়াইট মানি আছে কি না, থাকলে কিনতে পারবেন, না হলে পারবেন না- এটা তো হয় না।’ আবাসন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা আপনারা এ্যাপর্টমেন্ট করেন- আপনারা রড, সিমেন্ট, টাইলস, কমোড, গ্লাস, ডোরসহ ২৫০ ধরনের উপকরণ... এগুলো যে লাগাচ্ছেন, এগুলো ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে আসছে। তারপর এ্যাপার্টমেন্ট করছেন। এরপরে ১৪ পারসেন্ট আবার রেজিস্ট্রেশন ফিও দিচ্ছেন। এরপরে যদি এনবিআর-দুদক আইসা বলে যে, আপনি টাকাটা কোথা থেকে পাইলেন? এটা হবে? এজন্য আই ডোন্ট এগ্রি উইথ দ্যা গর্বমেন্ট।’ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তার দ্বিমতের কারণ ব্যাখ্যা করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি গর্বমেন্টের একজন মন্ত্রী হয়ে কেন বলছি? পৃথিবী এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। আপনার মোবাইলে দেখেন। আপনি অস্ট্রেলিয়া-মালয়েশিয়ার মেসেজ পাবেন। আমার কাছে অস্ট্রেলিয়ার মেসেজ আছে। তারা কী বলছে, ‘হ্যাভ ইউ সেকেন্ড হোম হিয়ার? হ্যাভ ইউর ভিসা?’ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইলে এখানে আপনি ভিসা পাবেন এবং দে আর নট গোয়িং ?টু আক্স হোয়ার ইউ আর গেটিং মানি ফ্রম। এটা হচ্ছে।’ আবাসন সমস্যা নিরসনে রাজউক উত্তরায় ১৫ হাজার, পূর্বাচলে ৬০ হাজার এবং ঝিলমিল প্রকল্পে ১৫ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট করছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি রাজধানীর বেইলি রোডে ৮৬ জন বিচারকের জন্য একটি ২০ তলা জাজেস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বক্তব্য রাখেন। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবাসন শিল্পে অবদান রাখায় সানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং ইক্যুইটি প্রপার্টিজ ম্যানেজমেন্ট (প্রা.) লি. কে স্বর্ণপদক দেয়া হয়। চারদিনের এ মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এবার মেলায় আটটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ১০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল প্রতিষ্ঠানসহ ৭২টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৯০টি স্টল রয়েছে।
×