ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ জানুয়ারি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গবর্নর

ঋণের প্রবাহ বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

ঋণের প্রবাহ বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে দেশীয় ও বৈদেশিক খাত থেকে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বেসরকারী খাতের ঋণের প্রবাহ বাড়লেও তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এ ছাড়া রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একদিকে বাজারে নগদ ডলারের সঙ্কট চরমে, অন্যদিকে টাকার বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে প্রতিনিয়ত বাজার থেকে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবস্থার পরিবর্তনে চলতি অর্থবছরের শেষার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৪ জানুয়ারি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। আসন্ন এই মুদ্রানীতিতে ঋণ বাড়ানোকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের সময় শেষ। জাতীয় বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশে মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার লক্ষ্যে প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। সরকার ঘোষিত এই লক্ষ্য দুটি অর্জনের পথ ঠিক থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য কর্মসূচীগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ইতোমধ্যে শেষার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ ও অন্যান্য নীতি প্রণয়ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। আগামী ১৫ জানুয়ারি হোটেল লেকশোরে অর্থনীতিবিদদের মতামত নেয়া হবে। ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটি বৈঠক করে মুদ্রানীতির রূপরেখা ঠিক করবেন। ২৪ জানুয়ারি তা ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন সম্পর্কে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের অবহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু নবেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক ০১ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে বছরের প্রথমদিকে ঋণ বিতরণ কম থাকলেও শেষের মাসগুলোতে তা ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যায়। বছর শেষে ‘উইন্ডো ড্রেসিং’ বা কৃত্রিম খাত তৈরির মতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করে ব্যাংকগুলো। এমনকি খেলাপি ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখায়। এটি ব্যাংকিং রীতিনীতির পরিপন্থী। সমগ্র অর্থনীতির স্বার্থে অস্বচ্ছ ও অনৈতিক উপায়ে ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যাংকগুলোর এমডিদের সতর্ক করা হয়। বছরজুড়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক প্রকল্পে ঋণ দিতে পরামর্শ দেয়া হয়। ঋণ বিতরণ বাড়াতে আমানতের বিপরীতে যে হারে সুদহার কমানো হয়েছে সমহারে ঋণের বিপরীতে সুদ হার কমাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মুদ্রানীতির পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয় ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু নবেম্বর পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই লক্ষ্যটি অর্জিত হয়নি। এ ছাড়া মানুষের কাছে থাকা নগদ টাকার (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) কমে গেছে। নবেম্বর কারেন্সি ইন সার্কুলেশন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। যা গত জুনে ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমেছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা নিট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু ২৭ নবেম্বর পর্যন্ত সরকার গ্রহণের চেয়ে পরিশোধ করেছে বেশি। আগের ঋণের ৪ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কম থাকায় কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মুদ্রানীতির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অন্যদিকে রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ার কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের আয় ব্যাংকিং চ্যানেল বাদ দিয়ে হুন্ডি হয়ে আসছে। হুন্ডি বেড়ে যাওয়া ব্যাংকিং চ্যানেলে নগদ ডলারের পরিমাণ ৭২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। গত অক্টোবরেও এই পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। তবে ডলার সঙ্কট মেটাতে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে, মুদ্রার বিনিময়হার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুলাই থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮২ কোটি ডলার বাজার থেকে কিনেছে কেন্দ্রীয় বাংক। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকার্স সভায় মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে ঋণ বিতরণের কয়েকটি অনৈতিক প্রক্রিয়া ও ব্যাংকের অভ্যন্তরে সুশাসনের ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলমান মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতায় নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
×