ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১৫৩ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১৫৩ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৃতীয় পর্যায়ে মেয়াদ বাড়ছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের। মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। তবে এর জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা আগের মেয়াদের প্রকল্প ব্যয়ের তুলনায় ১৫৩ শতাংশ বেশি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটি তৃতীয় ধাপে সংশোধনের জন্য আজ মঙ্গলবার একনেকে উত্থাপন করা হবে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিচ্ছে। জানা যায়, ৪ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে। এ সময়ে প্রকল্পটি পরিচালনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার সাড়ে ৮৪৭ কোটি টাকা। অর্থায় প্রকল্পটির মোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় সংশোধনীর তুলনায় এ ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ১৫৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে প্রকল্পটি সম্প্রসারণ বিবেচনায় নিয়ে কোন প্রকার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে জানা গেছে। প্রকল্পে মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনায় অবদান রাখা। এছাড়া জনশক্তি ও অর্থনৈতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে প্রতিটি বাড়িকে টেকসই কৃষি নির্ভর আয়ে নিয়ে আসা। প্রতিটি গ্রামের ৬০ জন অতি দরিদ্র ও ভিক্ষুক পরিবারের প্রতিনিধির (৪০ জন মহিলা ও ২০ জন পুরুষ) সমন্বয়ে গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা গঠন, ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলিত ধারণার পরিবর্তে ক্ষুদ্র সঞ্চয় পদ্ধতিতে মূলধন গঠন এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণোত্তর সহায়তা হিসেবে সরকারী অনুদান প্রদান করা। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সাড়ে ৪০ হাজার গ্রাম উন্নয়ন সংস্থাকে ১ লাখে এবং ২৪ লাখ থেকে ৬০ লাখ হাউজ হোল্ড অন্তর্ভুক্ত করা। দেশব্যাপী প্রায় ১ লাখ ভিক্ষুককে প্রকল্পভুক্ত করে পুঁজি গঠন করা। এছাড়া প্রকল্পের যে সব সুবিধাভোগী হতদরিদ্র অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আরও উন্নত ও টেকসই করার জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ কার্যক্রম নেয়া হবে। এদিকে মূল প্রকল্পের অধিকাংশ বিষয় বাস্তবায়িত হলেও- পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কতিপয় কার্যক্রম যেমন সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের বিপরীতে উৎসাহ বোনাস, সুবিধাভোগীদের প্রশিক্ষণোত্তর সহায়তাসহ কিছু কাজ হয়নি বলেও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ জুন। শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন, ২০১৪ অনুযায়ী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প রূপান্তরিত হয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে। বিলুপ্ত হয় প্রকল্পটি। কিন্তু পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ প্রকল্পটির কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করতে চান। এ নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। একটি পক্ষ চায় ব্যাংক চলুক, অন্য পক্ষ চায় প্রকল্প চলুক। এর সমাধানে সম্প্রতি সচিবালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংক ও প্রকল্পটি একসঙ্গে চালিয়ে নেয়ার। এরপরই মূলত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। যা আজ মঙ্গলবার একনেক সভায় উত্থাপন করা করে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবনায় প্রকল্পটির প্রধান প্রদান কার্যক্রমসমূহের মধ্যে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জরিপ ও সুবিধাভোগীদের ডাটাবেজ তৈরি, গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন সৃষ্টি, ৪০ হাজার ৯৫০টি ওয়ার্ডের সকল দরিদ্র পরিবারকে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পভুক্ত করে অর্থনৈতিক কার্যাবলীর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা, পুঁজি গঠন ও ঋণ সহায়তা দেয়া, মাঠ সম্প্রসারণ কর্মীদের ও সুফলভোগীদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, প্রতিটি উপজেলায় অনলাইন মার্কেটিং, ফুড প্রসেসিং কেন্দ্র নির্মাণ, বীজ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া, উপজেলা ভিত্তিক মার্কেটিং কেন্দ্রের সঙ্গে গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের কার্যকর ভূমিকা তৈরি করা, পল্লী পাঠশালা গঠন, সৌরবিদ্যুত প্যানেল/বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, প্রকল্প সদর দফতর, জেলা, উপজেলা এবং গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন দফতরে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, প্রকল্প সদর দফতরে ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা, প্রদর্শনী খামার স্থাপন এবং সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে উপকারভোগীদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাতকরণ। প্রকল্প পরিচালক ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রশান্ত কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রকল্প এবং ব্যাংক একই সঙ্গে চলবে। তবে ব্যাংকের আওতায় থাকবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। সম্প্রতি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন-২০১৪ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাংকের সঙ্গে প্রকল্পটির কার্যক্রমও আপাতত চালিয়ে নিবে সরকার। এ লক্ষ্যে আইনটি সংশোধনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুল হককে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী জনগণের সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে চালু হয় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি। আইন অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখে প্রকল্পটি ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। এর আগেই অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকটির ১শ’টি শাখার উদ্বোধন করেন। ড. প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, ক্ষুদ্রঋণের যন্ত্রণা থেকে গরিব মানুষকে মুক্তি দিতে হলে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আরও ৩৬ লাখ পরিবারকে এ প্রকল্পের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্পটিকে চালিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। আগামীকে আরও ১ কোটি ৮০ মানুষ এ প্রকল্পের আওতায় চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবেন। তাই ব্যাংকের পাশাপাশি প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার আবেদন করা হয়েছিল। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধন করে এখন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কিভাবে পরিচালিত হবে এবং ব্যাংকের অধীনে প্রকল্পটি কিভাবে চালিয়ে নেয়া যাবে সেসব আইটি বিষয় নির্ধারণে একটি আন অফিসিয়ালি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি শীঘ্রই আইন সংশোধনের একটি প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে আশা করছি।
×