ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ এক শ’ বন্দরের তালিকায় ১১ ধাপ এগলো চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শীর্ষ এক শ’ বন্দরের তালিকায় ১১ ধাপ এগলো চট্টগ্রাম বন্দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক শিপিং বিষয়ক সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৭৬ নম্বরে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৮৭তে। অর্থাৎ একলাফে ১১ ধাপ এগিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এ বন্দর। লয়েডস লিস্টের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত ২০১৫ সালের কন্টেইনার পরিবহনের জন্য শীর্ষ ১০০টি বন্দরের তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। লয়েডস লিস্টের প্রকাশিত বছরভিত্তিক তালিকায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের কন্টেইনার উঠানামার সংখ্যা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৮৭তে। কিন্তু ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ও কন্টেইনার উঠানামা বাড়ার কারণে ১১ ধাপ এগিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে আরও বলা হয়েছে, আমেরিকার চার্লস্টোন (৭৮), স্পেনের বার্সেলোনা (৭৯), পাকিস্তানের করাচী (৮০), সৌদি আরবের দাম্মাম (৮১), ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন (৮৩), রাশিয়ার সেইন্ট পিটাসবার্গ (৮৬), ভারতের চেন্নাই (৯১), থাইল্যান্ডের ব্যাংকক (৯২), আরব আমিরাতের আবুধাবি (৯৫), আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সসহ (১০০) বিশ্বের নামিদামি বন্দরকে পিছনে ফেলে এই খেতাব অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কে লয়েডস লিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এই চট্টগ্রাম বন্দর। বিশ্ববাণিজ্যে ধীরগতি থাকা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ২ মিলিয়ন একক কন্টেইনারের বেশি পরিবহন হয়েছে এই বন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে এই বন্দর দিয়ে ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭ একক (প্রতিটি ২০ ফুট) কন্টেইনার উঠানামা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ একক কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে। বছর শেষে তা প্রায় ২৫ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্যে ধীরগতির কারণে গত বছর বিশ্বের অনেক বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনে ঋণাত্মক অবস্থায় ছিল। আগের তালিকায় স্থান পাওয়া ১০০টি বন্দরের মধ্যে অন্তত ৩৬টি বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন কমেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দরের কন্টেইনার পরিবহন ১৭ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি-রফতানির সবপণ্যই কন্টেইনারে পরিবহন হওয়ায় কন্টেইনার পরিবহনের হার বাড়লে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়। বন্দরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আমদানি-রফতানির হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশের চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্যের সিংহভাগ দখল করে আছে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও তৈরি পোশাক। এছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল, ওষুধশিল্প, ইস্পাত কারখানাসহ অসংখ্য কারখানার কাঁচামাল আনা-নেয়া হয় এই কন্টেইনারে করে। চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম বলেন, নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন ক্রমে বাড়ছে। বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্দরের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার কাজ দ্রুত শেষ হবে। আশা করছি, বিশ্বের সেরা বন্দরের তালিকায় আরও এগিয়ে যেতে পারব আমরা। লয়েডস লিস্টের সেরা ১০০তে তালিকার সর্বোচ্চ ২০টি বন্দরই চীনের। এক নম্বরে রয়েছে চীনের সাংহাই। ২০১৫ সালে এই সাংহাই বন্দর দিয়ে ৩ কোটি ৬৫ লাখ একক কন্টেইনার পরিবহন হয়। যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর বন্দর এবং চীনের সেনঝেন বন্দর। সেরা ২৫টি বন্দরের মধ্যে চীনের ১০টি, আমেরিকার ৩টি এবং মালয়েশিয়ার ২টি বন্দর রয়েছে। প্রসঙ্গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯ টিইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গ্রোথ বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
×