ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্স আনতে ব্যর্থ তিন এনআরবি ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৮ আগস্ট ২০১৬

রেমিটেন্স আনতে ব্যর্থ তিন এনআরবি ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ দেশের বিনিয়োগে অবদান রাখতে অনিবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে অভিবাসীরা দেশের বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের একটি প্ল্যাটফর্ম পায়। এছাড়াও বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স আহরণেও এসব ব্যাংক বিশেষ অবদান রাখবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও রেমিটেন্স আহরণে দৃশ্যমান কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি ব্যাংকগুলো। শুধু রেমিটেন্সেই নয়, ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণেও চোখে পড়ার মতো কার্যক্রম নেই। তবে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণে এগিয়ে যাচ্ছে এনআরবি ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও ব্যাংকগুলোকে সঠিক পথে পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সব পক্ষকে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৪শ’ ৯২ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার। যার মধ্যে তিন এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বা ৯৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। রেমিটেন্স আহরণে মনোযোগের অভাবের কারণেই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স আহরণ হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত অর্থবছরে এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ৫২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩২ লাখ ও ১১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ রেমিটেন্স আহরণ নিয়ে স্বভাবতই ব্যাংকগুলো কী ধরনের কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার ডলার, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৮০ হাজার ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এনআরবি ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল বৈদেশিক বাণিজ্যে ভূমিকা রাখার শর্তে। কিন্তু তারা স্থানীয় ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করছি। যেসব জায়গা থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে সেসব জায়গা আমরা এখনও কাভার করতে পারি নাই। তবে আমরা ধীরে ধীরে কাজ করে যাচ্ছি। এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সঙ্গে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলটা হয়ত এখনি পাচ্ছি না, তবে কিছুদিন পর থেকে এ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স আহরণে গতি আসবে। শুধু রেমিটেন্সেই নয়, ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণেও চোখে পড়ার মতো কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ২শ’ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। যার মাধ্যমে ১০ টাকার হিসাবধারীদের ঋণ প্রদান করা হয়। এখানে ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে শুধু এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক রয়েছে। এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল এ তহবিলের ঋণ বিতরণে আগ্রহী নয়। অন্যদিকে নতুন ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যাও কম। খরচ কমিয়ে তারা সারাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ছড়িয়ে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দিতে পারত। কিন্তু সেখানেও তিন এনআরবির শুধু এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লাইসেন্স নিয়ে কাজ করছে। বাকি দুটি এখানও আসেনি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। আর সারাদেশে কৃষি ও এসএমই ঋণ বিতরণ করতে হলে ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বড় করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল শেষে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। ঋণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। একই সময়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার আমানত ও ২ হাজার ৮৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। আগের বছরে যা এক হাজার ১৯৫ ও এক হাজার ২৩ কোটি টাকা ছিল। এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের আমানত ৮০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩০১ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দেয়ার একটা কারণ ছিল তারা নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু করবে গ্রাহকদের জন্য। পুরনো ব্যাংকগুলো যা করে তার বাইরে গিয়ে কিছু করবে। কিন্তু তারা যেটা করছে তা হলো পুরনো ব্যাংকগুলোকে অনুসরণ করে বড় বড় ঋণ বিতরণের জন্য গ্রাহকদের পেছন পেছন ঘুরে। যে কাজগুলো পুরনোরা করে এরাও ঠিক তাই করে। এ ব্যাংকগুলোর অনেক ঋণও ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে তাদের ওপর দেশ-বিদেশের কোন গ্রাহকই এখনও আস্থা রাখতে পারছেন না। এ কারণেই মূলত ব্যাংকগুলো রেমিটেন্স আহরণে ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে জানান সাবেক এ গবর্নর। প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধি, ট্রেজারি বন্ড ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো বেশকিছু শর্তে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের আবেদিত তিনটি এনআরবি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড। ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলো তফসিলি ব্যাংক হিসেবে দেশে কাজ শুরু করে।
×